Skip to content Skip to sidebar Skip to footer

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী: (Powers and functions of the Prime Minister of India).

প্রধানমন্ত্রী হলেন ভারতের প্রকৃত শাসকপ্রধান। ইংল্যান্ডের সংসদীয় শাসনব্যবস্থার অনুকরণে ভারতেও সংসদীয় শাসনব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ভারতীয় শাসনব্যবস্থা তথা রাজনীতির ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিপত্তির বর্তমান অবস্থা অধ্যাপক জোহারি প্রধানমন্ত্রী পদের রাষ্ট্রপতি করা (Presidential Nisation of the Prime Minister) বলে অভিহিত করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেন ক্যাবিনেট ও মন্ত্রীপরিষদের মূল ভিত্তি। তিনি পার্লামেন্টের নেতা। ভারতীয় সংবিধানের ৭৪ (১) নং ধারায় বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতিকে তাঁর কার্যাবলি সম্পাদনের ক্ষেত্রে সাহায্য ও পরামর্শদানের জন্য একটি মন্ত্রীপরিষদ থাকবে। তার শীর্ষে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। ("There shall be a Council of Ministers at the head to aid and advise the President.")।


নিয়োগ,কার্যকাল,বেতন:
সংবিধানের ৭৫(১) নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী কে নিয়োগ করেন। তত্ত্বগতভাবে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী কে নিয়োগ করলেও বাস্তবে রাষ্ট্র্রপতির কোন “স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা” নেই। লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বা নেত্রী কে এই রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ করেন।কিন্তু লোকসভায় কোন দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলে রাষ্ট্রপতি নিজের মন মত ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ করতে পারেন। অবশ্য সে ক্ষেত্রেও ওই পদে নিযুক্ত ব্যক্তির প্রতি লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই লোকসভা ও রাজ্যসভার সদস্য হতে হয়।পার্লামেন্টের কোন পক্ষের সদস্য নন এমন কোন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্ত হলে তাকে ছয় মাসের মধ্যে পার্লামেন্টের সদস্য হতে হয়, অন্যথায় তিনি ওই পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রীর কার্যকালের সাধারণ মেয়াদ ৫ বছর। অবশ্য এই সময় কাল শেষ হওয়ার পূর্বে লোকসভা ভেঙ্গে দেওয়া হলে তার কার্যকালের মেয়াদ হ্রাস পায়। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি মাসে ২,৮০,০০০ হাজার টাকা বেতন পান। তাছাড়া তিনি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা লাভ করেন।


প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী:

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী কে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে আলোচনা করা যেতে পারে:-

লোকসভার নেতা বা নেত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী:
লোকসভার নেতা বা নেত্রী হলেন প্রধানমন্ত্রী। লোকসভার অধিবেশন কখন ডাকা হবে, কত দিন চলবে, কোন কোন বিষয়ের উপর আলোচনা চলবে সে সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নিজে সিদ্ধান্ত নেন। অধিবেশন স্থগিত রাখা বা লোকসভা ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিকে তিনি পরামর্শ দিতে পারেন। সরকারের প্রধান মুখপাত্র হিসেবে তিনি লোকসভায় সরকারি নীতি সমূহের ব্যাখ্যা প্রদান করেন।সভায় বিতর্ক চলাকালে কোন প্রধানমন্ত্রীর কোনরূপ অসুবিধার সম্মুখীন হলে তাকে সাহায্য করার জন্য প্রধানমন্ত্রী এগিয়ে আসেন। গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো বিল পাস করানোর দায়িত্ব তাকেই বহন করতে হয়। সংসদে বিরোধী দলগুলি সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার সম্পর্ক রেখে চলেন। কেবল লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বা নেত্রী হিসেবে নয়, সমগ্র সভার নেতা বা নেত্রী হিসেবেই তাকে কাজ করতে হয়।


মন্ত্রী সভার গঠনে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা:
সংবিধান অনুসারে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়োগ করেন। মন্ত্রিসভা গঠনে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা চূড়ান্ত। তবে প্রধানমন্ত্রীর সদস্যদের নিয়োগের সময় প্রধানমন্ত্রীকে কয়েকটি বিষয়ের ওপর দৃষ্টি রাখতে হয়।
এগুলি হলো–
  •  নিজ দলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের মন্ত্রিসভায় স্থান দান।
  •  সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রতিনিধিদের মন্ত্রিত্ব প্রদান।
  •  মন্ত্রিসভায় তপশিলি জাতি ও অনন্ত সম্প্রদায়গুলির প্রতিনিধিদের স্থান দান ইত্যাদি।
মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত ক্ষমতা হলো, তিনি যে কোনো মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলতে পারেন বা রাষ্ট্রপতি কে দিয়ে পদচ্যুত করাতে পারেন। এক কথায় প্রধানমন্ত্রী অপ্রিয় কোনো সাংসদ মন্ত্রিসভায় টিকে থাকতে পারেন না। আপাতদৃষ্টিতে অনেকে প্রধানমন্ত্রীকে 'সমমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্র গণ্য' (Primus inter pares’– first among equals) বলে অভিহিত করলেও এটা দেখা যায় যে, মন্ত্রী সভায় প্রধানমন্ত্রীর প্রভাব প্রতিপত্তি ও মর্যাদা সবচেয়ে বেশি।


ক্যাবিনেটের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী:
প্রধানমন্ত্রী ক্যাবিনেটের নেতা।ক্যাবিনেটের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী যেসব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তা হল-
  • প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শেই রাষ্ট্রপতি ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের নিয়োগ ও পদচ্যুত করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোনো মন্ত্রীর নীতিগতভাবে বা অন্য কোনো কারণে বিরোধ বাধলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়।
  • প্রধান মন্ত্রি ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের দপ্তর বন্টন ও পুনর্বন্টন করেন।
  • তিনি ক্যাবিনেটের সভায় সভাপতিত্ব করেন।তার নির্দেশেই সভার যাবতীয় কার্যক্রম নির্ধারিত হয়।এমনকি ক্যাবিনেটের নীতি নির্ধারণের ব্যাপারে ও প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।


রাষ্ট্রপতির প্রধান পরামর্শদাতা:
প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি প্রধান পরামর্শদাতা। প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যম নিয়ে রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিসভার মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়।মন্ত্রিসভার যাবতীয় সিদ্ধান্ত শাসন চক্রান্ত কোন বিষয় এবং আইন প্রণয়নের জন্য মন্ত্রিসভায় গৃহীত কোনো প্রস্তাব সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি কোন কিছু জানতে চাইলে সে বিষয়ে তাকে অবহিত করা প্রধানমন্ত্রীর কর্তব্য। তবে ভারতীয় সংবিধানে তত্ত্বগতভাবে যাই বলা হোক না কেন বাস্তবে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমেই যাবতীয় কার্য সম্পাদন করেন। সংবিধানের ৪২ এবং ৪৪ তম সংবিধান সংশোধনীর ফলে বর্তমানে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার পরামর্শপ্রধানমন্ত্রী হলেন ভারতের প্রকৃত শাসকপ্রধান। ইংল্যান্ডের সংসদীয় শাসনব্যবস্থার অনুকরণে ভারতেও সংসদীয় শাসনব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ভারতীয় শাসনব্যবস্থা তথা রাজনীতির ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতিপত্তির বর্তমান অবস্থা অধ্যাপক জোহারি প্রধানমন্ত্রী পদের রাষ্ট্রপতি করা (Presidential Nisation of the Prime Minister) বলে অভিহিত করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেন ক্যাবিনেট ও মন্ত্রীপরিষদের মূল ভিত্তি। তিনি পার্লামেন্টের নেতা। ভারতীয় সংবিধানের ৭৪ (১) নং ধারায় বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতিকে তাঁর কার্যাবলি সম্পাদনের ক্ষেত্রে সাহায্য ও পরামর্শদানের জন্য একটি মন্ত্রীপরিষদ থাকবে। তার শীর্ষে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। (There shall be a Council of Ministers at the head to aid and advise the President)। 

জাতির নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী:
প্রধানমন্ত্রী জাতির নেতা। সমগ্র জাতির নেতা বা নেত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যা’বলি বিশ্লেষণ করে জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছা অনুধাবন, জনমতের উপলব্ধি এবং নিয়ন্ত্রণ প্রধানমন্ত্রীর একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তার ওপর সরকার ও দলের জনপ্রিয়তা নির্ভর করে। রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক প্রভৃতি ব্যাপারে কোন সমস্যা সৃষ্টি হলে সেগুলির সমাধানের উপায় সম্পর্কে সরকারের মতামত জ্ঞাপন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারের প্রতিষ্ঠার কথা জানিয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা:
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর হাতে পররাষ্ট্র দপ্তর থাকুক বা না থাকুক তিনি দেশের বৈদেশিক বা পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিশ্ব রাজনীতিতে ভারতের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় তাকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হয়। ভারতে পররাষ্ট্র নীতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যই ভারতরাষ্ট্রের বক্তব্য হিসাবে গণ্য হয়। তাই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারতের অবস্থানটি কি হবে তা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের উপরেই প্রধানতঃ নির্ভর করে। বিশেষ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি ভারতের প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত থেকে ভারতের আদর্শ ও নীতি সম্পর্কে বিশ্ববাসী ও দেশবাসীকে সে সম্পর্কে অবহিত করেন।


ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা:
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রনীতিবিদদের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা ও পদমর্যাদা কে কেন্দ্র করে দুটি পরস্পর বিরোধী মতের অবশ্যই লক্ষ করা যায়। প্রথম মত অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী 'সমপর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য'।

সাধারণ কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় মন্ত্রিসভায় কোন ভোটাভুটি হয় না। যদি কোন ক্ষেত্রে ভোটগ্রহণের একান্ত প্রয়োজনীয় দেখা দেয় তবে অন্যান্য মন্ত্রীর মতো প্রধানমন্ত্রীও একটিমাত্র ভোট দানের অধিকারী।

যাঁরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী কে কেবল 'সমপর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য' বলে মেনে নিতে সম্মত নন তাঁদের কে প্রথম দুটি গোষ্ঠীতে ভাগ করা যায়। প্রথম গোষ্ঠীভুক্ত ব্যক্তিরা প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপক ও বহুমুখী ক্ষমতা প্রত্যক্ষ করে তাকে একনায়ক বলে চিহ্নিত করার পক্ষপাতি। তাদের মতে তত্ত্বগতভাবে রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীদের নিয়োগ ও বরখাস্ত করতে পারলেও কার্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমেই করে থাকেন। যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সহকর্মীদের পরামর্শ ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন এবং তার সিদ্ধান্ত কার্যক্ষেত্রে অপ্রতিরোধ্য।

দ্বিতীয় গোষ্ঠীর সমর্থকরা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে একনায়ক বলতে রাজি নন।তাদের মতে, ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধীর প্রধানমন্ত্রীত্ব কালে প্রধানমন্ত্রী পদের রাষ্ট্রপতিকরণ ঘটেছিল। কারণ তারা মার্কিন রাষ্ট্রপতি মত অত্যাধিক শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলেন।


         ভারতের সংসদীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুত প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা বরং সে তার নিজের গুণগত যোগ্যতা বিচক্ষণতা ও ব্যক্তিত্বের ওপর নির্ভরশীল বলে সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সেই সঙ্গে লোকসভায় ক্ষমতাসীন জোট বা দলের শক্তি দলীয় আনুগত্য প্রকৃতি ও এক্ষেত্রে বিচার্য বিষয় হয়ে ওঠে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন for "ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলী: (Powers and functions of the Prime Minister of India)."