লোক আদালত: (Lok Adalat).


গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো ন্যায় প্রতিষ্ঠাত করা। সেজন্য অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মতো ভারতেও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু বিচার প্রার্থীদের সংখ্যা অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় আদালতগুলির পক্ষে বিভিন্ন মামলার দ্রুত শেষ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

তাই ভারতের বিভিন্ন আদালতের ওপর – 

১) অস্বাভাবিক চাপ হ্রাস।

২) তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্ব–পূর্ণ মামলাগুলোর তাড়াতাড়ি শেষ করা।

৩) নাগরিকদের কার্যত বিনা খরচে ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারকে বাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যে লোক আদালত গঠন করা হয়। 

আদালতের বাইরে মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির অত্যন্ত কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে এই আদালতগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

তাই লোক আদালত ব্যবস্থাকে বিরোধ নিষ্পত্তির এক অভিনব বিকল্প রূপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। 

লোক আদালতের উদ্দেশ্য:

গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা। সেজন্য অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মত ভারতে ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ গড়ে তোলা হয়েছে। লোক আদালত গঠনের উদ্দেশ্য হল সহজ উপায়ে দ্রুত বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা। লোক আদালতের বিচার সময় সাপেক্ষ নয়, খরচ খুবই কম হয়। সাধারণত দরিদ্র ব্যক্তিরা এই আদালতের মাধ্যমে দ্রুত ন্যায়বিচার পেতে পারে। লোক আদালতের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থার প্রসার ঘটে অন্যান্য আদালতের কার্যভাগ লাঘব হবে।

লোক আদালতের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:

1982 সালের মার্চ মাসে গুজরাটে প্রাথমিকভাবে লোক আদালতের যাত্রা শুরু হলেও "আইনগত পরিষেবা কর্তৃপক্ষ আইন, 1987" কার্যকর হওয়ার ফলে বর্তমানে লোক আদালতগুলি একটি আইনগত ভিত্তি লাভ করেছে। 1985 সালের 6 অক্টোবর দিল্লিতে প্রথম এধরনের লোক আদালতের উদ্ভাবন করা হয়। উদ্ভাবন করেন বিচারপতি পি.এন. ভগবতী। সর্বভারতীয় ইনগত সাহায্য ও পরামর্শ প্রদান বোর্ড এর দিল্লি শাখার উদ্যোগে লোক আদালত গঠিত হয়। প্রথম দিনে পাঁচটি আদালত গঠিত হয়। অবসরপ্রাপ্ত দুইজন বিচারপতিকে নিয়ে প্রত্যেকটি আদালত গঠিত হয় এবং সহজ পদ্ধতিতে বিচারকার্য পরিচালিত হয়। একদিনেই 150 টির মতো মামলার নিষ্পত্তি হয়।

লোক আদালতের গঠন:

লোক আদালত কার্যরত বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারবিভাগীয় ব্যক্তি ও অন্য কয়েকজন ব্যক্তিকে নিয়ে গঠিত হবে তবে অন্য কয়েকজন ব্যক্তির সংখ্যা কত হবে, তা লোক আদালত গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে আইনগত পরিষেবা কর্তৃপক্ষ স্থির করে দেয়। প্রসঙ্গত মনে রাখা দরকার পি.এন.ভগবতী কে লোক আদালতের জনক বলা হয়। 

লোক আদালতের কার্যাবলী:

লোক আদালত জনস্বার্থে বহুবিধেয় কাজ সম্পাদন করেন। যেমন - দুর্ঘটনাজনিত বিরোধ, দাম্পত্য  জীবনের বিরোধ,সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের মীমাংসা ইত্যাদি। দ্রুত গরিব মানুষদের সুবিচার দেওয়া লোক আদালতের প্রধান কাজ ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে বহু মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে সেখানে লোক আদালতের গুরুত্ব অপরিসীম। ভারতে বহু গরীব লোককে বিনা পয়সায় আইনি সাহায্য দরকার প্রতিষ্ঠানিক আদালতে মামলা করা টাকা এই গরীব লোক গুলো কোথা থেকে পাবে।

লোক আদালতের কার্যপদ্ধতি: 

(ক) বিবাদমান পক্ষ দুটির মধ্যে যেকোনো একটি পক্ষ সংশ্লিষ্ট বিরোধের নিষ্পত্তির জন্য লিখিতভাবে লোক আদালতে আবেদন জানালে এবং সেই আবেদন পত্র পরীক্ষার পর গ্রহণযোগ্য বলে মনে করলে লোক আদালতের সংশ্লিষ্ট বিরোধটির নিষ্পত্তির দায়িত্ব নেই। 


(খ) যে কোনো বিরোধ মীমাংসার ক্ষেত্রে এই আদালত ন্যায়বিচারে আদর্শ,সততা ও নিরপেক্ষতার নীতি ন্যায় ব্যবহার ও আইনি আদর্শের নীতি অনুসরণ করতে থাকে। 

(গ) মনে রাখা দরকার যে বিবাদে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলি সম্মতিসহ কেবলমাত্র আপস বা মীমাংসার ভিত্তিতে লোক আদালতের বিবাদ নিষ্পত্তির রায় দিতে পারে। 


(ঘ) লোক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যায় না। 


(ঙ) এই আদালত যেসব বিবাদ নিস্পতির রায় দেয় সেগুলিকে আদালতের রায়ে হিসেবে গণ্য করা। 


     ব্যয় সাপেক্ষ নয় বলে এবং আপস-মীমাংসার সরল অনুসরণ করে তাড়াতাড়ি বিবাদের  নিষ্পত্তি করা যায় বলে লোক আদালত বর্তমানে যথেষ্ট জনপ্রিয়। সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে লোক আদালত সরলাপন‍্য হওয়া বর্তমান বাড়ছে। বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ,গুজরাট,মহারাষ্ট্র,উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের লোক আদালত তার ভূমিকার মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

2 মন্তব্যসমূহ