Skip to content Skip to sidebar Skip to footer

গান্ধীর সত্যাগ্রহ: (Gandhi's Satyagraha).

গান্ধীজীর রাজনৈতিক চিন্তা দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল সত্যাগ্রহ। সত্যাগ্রহ কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল সত্যের প্রতি আগ্রহ। তাঁর মতে, সত্যের প্রতি অবিচল থেকে যদি অন্যায় ও স্বৈরাচারী শক্তির মােকাবিলা করা যায় তাহলে সেই অশুভ ও স্বৈরাচারী শক্তির বিনাশ ঘটানাে সম্ভব হবে।  অন্যভাবে বলা যায়, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শক্তির দ্বারা অশুভকে প্রতিরােধ ও প্রতিহত করাই হল সত্যাগ্রহ। বলাবাহুল্য, সত্যাগ্রহ হল বলপ্রয়ােগ না করে অর্থাৎ ঘৃণা, ক্রোধ ও হিংসার আশ্রয় না নিয়ে যুদ্ধ করার এক অভিনব কৌশল সত্য, অহিংসা ও আত্মত্যাগের সমন্বয়ী রূপই হল সত্যাগ্রহ যা প্রতিটি মানুষের সহজাত জন্মগত অধিকার বলে বিবেচিত হয়। গান্ধিজি বিশ্বাস করতেন যে, সত্য ও অহিংসা যেন একটি মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এই দুই বিষয়কে কখনােই আলাদা করা যায় না।


🌍সত্যাগ্রহের উৎস:
খ্রিস্টধর্ম এবং পবিত্র বাইবেল গ্রন্থের দ্বারা গান্ধিজি প্রভাবিত হয়েছিলেন। বাইবেলের বিভিন্ন উপদেশ বিশেষ করে প্রেমের দ্বারা অন্যায়কে প্রতিরােধ করা গান্ধীর মনে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। গান্ধীজি গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন গীতার কর্মযােগের আদর্শ এবং থেরো, রাসকিন, টলস্টয় প্রমুখ মনীষীদের জীবনাদর্শের দ্বারা, যার ফলস্বরূপ এই সত্যাগ্রহ তত্ত্বের জন্ম হয়। গান্ধীজীর মতে, হল সত্যাগ্রহ যা অহিংসার পথে সমাজের অন্যায় ও স্বৈরাচারী শক্তিকে প্রতিহত করতে অনুপ্রাণিত করা।


🌍সত্যাগ্রহের কৌশল:
  • সত্যাগ্রহীরা পরস্পরকে বিশ্বাস করবে।
  • নেতার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য থাকতে হবে।
  • সত্যাগ্রহী সদাসর্বদা ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকবে।
  • সত্যাগ্রহী আনন্দের সঙ্গে বন্দুক ও বেয়নেটের সামনে দাঁড়াতে পারবে।
  • বিপক্ষ ও সহকর্মীর প্রতি হিংসার ভাব পোষণ করা সত্যাগ্রহ পক্ষে অধর্ম।
  • সত্যাগ্রহী সংগ্রামের প্রধান চালিকাশক্তি হল চরিত্র শক্তি। 
  • সত্যাগ্রহী দের পাঁচটি পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। যথা:-তাচ্ছিল্য, উপহাস, নিন্দাবাদ, দমন ও সন্ত্রম।



🌍গান্ধিজি সত্যাগ্রহের গুরুত্বপূর্ণ দিক:

👉সত্য: সত্যাগ্রহের প্রথম মৌলিক উপাদান টি হল সত্য। গান্ধীজী চরম সত্য বলতে কি বোঝাতে চেয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি সত্য কি ঈশ্বর বলে ঘোষণা করেছেন। তার কাছে সত্যিই হলো লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার উপায় বা মাধ্যম হলো অহিংসা। এইভাবে সত্য এবং হিংসার মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করলেও তিনি সত্য ও অহিংসার কে একটি দাগহীন মুদ্রার দুই পিঠ বলে মনে করেন এবং খুব কম ক্ষেত্রেই তিনি অহিংসাকে সত্যের সমার্থক শব্দ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তবে তিনি একথা বলেছিলেন যে সত্য হলো একটি আপেক্ষিক ধারণা মাত্র। চরম সত্য কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে গান্ধী নিজেই উপায় এর সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে বলেছিলেন।

👉অহিংসা: গান্ধীজীর রাজনৈতিক দর্শন তার অহিংসাতত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত। সত্য সন্ধানের উদ্দেশ্যে তিনি অহিংস খুজে পেয়েছিলেন, যা তার মস্তিষ্কজাত নয়। অহিংসার মধ্য দিয়ে সত্যলাভ সম্ভব বলেই একজন সত্যাগ্রহী সর্বদাই হিংসাকে পরিহার করে চলবে। সত্যাগ্রহী অন্যায়কে ঘৃণা করলেও অন্যায়কারীকে ভালােবাসবে, তাদের যা কিছু বিরোধিতা সবই অন্যায়ের বিরুদ্ধে। সত্যাগ্রহের মূল উদ্দেশ্যই হল অন্যায়কারীর হৃদয় পরিবর্তন করে তাকে অন্যায় থেকে নিবৃত্ত করতে চাওয়া।


👉আত্মনিগ্রহ: আত্মনিগ্রহ বা আত্মপীড়নের নামান্তর হল সাহস। প্রতিপক্ষের হৃদয় জয় করা এবং তাদের নৈতিক পরিবর্তন ঘটানাের জন্য সত্যাগ্রহী দের এই আত্মনিগ্রহ বা আত্মপীড়নরূপ সাহসের প্রয়ােজন। গান্ধীজীর মতে, ভালােবাসা কোনাে কিছুর দাবি করে না, ভালােবাসা কখনও প্রতিশােধ নেয় না বরং তার পরিবর্তে নিজে যন্ত্রণা ভোগ করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, পরাধীন ভারত বর্যে গান্ধীজীর অনশন ছিল আত্মনিগ্রহরূপ একপ্রকার ভালােবাসা, যেখানে বৃহত্তর সমাজের স্বার্থ জড়িত ছিল।

👉কলাকৌশল: গান্ধিজি সত্যাগ্রহে কতকগুলি কলাকৌশলকে অনুসরণ করতে বলেছেন। যথা :-
  • কারোর কোনাে কথায় প্রলােভনের ফাদে পা না জড়ানাে।
  • জনগণের কাছে যে ব্যাপারগুলি মৌলিক গুরুত্ব বলে বিবেচিত হয়, সেগুলিকে কষ্ট স্বীকারের দ্বারা অর্জন করতে হবে।
  • সত্যাগ্রহে নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে সবসময় চলতে হবে। এখানে উচ্ছলতা কোনাে স্থান নেই।
  • বিজয়ী আধিপত্যকারীদের কাছে কোনােভাবেই মাথা নত না করা।
  • সত্যাগ্রহী আত্ম বলে বলীয়ান হতে হবে প্রভৃতি।

🌍গান্ধিজি সত্যাগ্রহের বিভিন্ন রূপ:

👉অহিংস অসহযোগ: 
গান্ধীজীর সত্যাগ্রহ আন্দোলনের উল্লেখযােগ্য পদ্ধতিগুলির মধ্যে একটি হল অসহযোগ - যা হল অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে নরমপন্থী আন্দোলন। আন্দোলনের এই পদ্ধতিকে গান্ধিজি হােমিওপ্যাথির সঙ্গে তুলনা করেছেন কারণ এটি ধীরে ধীরে কাজ করে। তার মতে, সঙ্গে সহযােগিতা ও কু সঙ্গে অসহযােগিতা করা উচিত। অসহযোগ হল কর্তৃপক্ষকে কু’ পরিত্যাগ করিয়ে সু'-কে গ্রহণ করতে বাধ্য করা। কোনাে দেশের শাসন ব্যবস্থায় জনগণ সরকারকে প্রয়ােজনীয় সহযােগিতা না করলে, তাকে বলা হয় অসহযোগ। এইভাবেই সরকারের সঙ্গে অসহযােগিতার মাধ্যমে প্রশাসনকে স্তব্ধ করে সরকারকে জনগণের দাবি মানতে বাধ্য করা হয়। গান্ধিজি ধর্মঘট, হরতাল, বয়কট প্রভৃতির মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে অসহযােগিতা করে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।


👉আইন অমান্য: 
গান্ধীজীর সত্যাগ্রহ আন্দোলনের অপর একটি উল্লেখযােগ্য পদ্ধতি হল আইন অমান্য। অহিংস আইনঅমান্যকে গান্ধি সংবিধানসম্মত এবং বিশুদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন। ইয়ং ইন্ডিয়া পত্রিকায় তিনি লিখেছেন, আইন অমান্য আন্দোলন। হল ভদ্র ও শান্তিপূর্ণভাবে অনৈতিক নিয়মকানুনকে ভঙ্গ করার পদ্ধতি। অহিংস আইন অমান্য গান্ধী দুই ভাগে ভাগ করেছেন, যথা一

➡️আক্রমণাত্মক: নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই বা আন্দোলনকে আক্রমণাত্মক আইন অমান্য বলা হয়।আত্মরক্ষামূলক: অমানবিক মর্যাদা হানিকর এবং মনুষ্যত্ব বিরােধী অনৈতিক আইনের বিরুদ্ধে অনিচ্ছা সত্ত্বেও অহিংস ভাবে সম্পাদিত আইন হল আত্মরক্ষামূলক আইন অমান্য।

➡️অনশন: গান্ধীর মতে, সত্যাগ্রহের অন্য সব পদ্ধতি বা কৌশল বা আন্দোলন ব্যর্থ হলে সত্যাগ্রহী শেষ অস্ত্র হিসেবে বেছে নেবেন অনশনকে। অনশনের অর্থ হল কোনাে খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ না করে দাবি আদায় করার জন্য অনশন চালিয়ে যাওয়া। অনশন দু-রকমের হয়, যথা— এক, স্বার্থযুক্ত অনশন এবং দুই, স্বার্থশূন্য অনশন। অনশন হল আত্মিক কর্মযােগ এবং তা ঈশ্বরের উদ্দেশে নিবেদিত। অনশনের চরম রূপ হল আমৃত্যু অনশন। অধ্যাপক স্টেইনবার্গ অনশনকে একটি নির অস্ত্রাগারে রক্ষিত সর্বাপেক্ষা ধারালাে অস্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।


👉পিকেটিং: 
গান্ধীজীর সত্যাগ্রহ আন্দোলনের একটি উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি হল পিকেটিং। সত্যাগ্রহীরা দেশি-বিদেশি দোকানের সামনে দ্রব্য ক্রয়ে বাধা সৃষ্টি করেছিল বলেই গান্ধিজি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পদ্ধতি বা কৌশল হিসেবে পিকেটিং ব্যবস্থাকে অস্ত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। বলাবাহুল্য, তাঁর এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি নারীদের অগ্রণী ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। গান্ধিজির ভাষায়, নারী ছাড়া হৃদয়ের দরবারে আবেগময় আবেদন আর কে জানাতে পারে?


👉গঠনমূলক কর্মসূচি: 
ইতিবাচক গঠনমূলক কর্মসূচি পালন ছিল সত্যাগ্রহ আন্দোলনের আরও একটি পদ্ধতি প্রকরণ। গান্ধিজির মতে, গঠনমূলক কর্মসূচি নেই এমন কোন আন্দোলন করার অর্থ হল, যে রােগী নড়তে বা চলতে পারে না তাকে হাতের দ্বারা খাবার খেতে বলার সমার্থক।


👉অন্যান্য পদ্ধতি: 
সত্যাগ্রহের উপরোক্ত উপায় বা পদ্ধতি প্রকরণ ছাড়াও গান্ধিজি প্রয়ােজন সাপেক্ষে অহিংস অন্যান্য যেসকল উপায় অবলম্বনের উপর জোর দিয়েছিলেন সেগুলি হল - পারস্পরিক আলাপ-আলােচনা, আবেদন-নিবেদন, বয়কট, বিক্ষোভ-আন্দোলন, সভাসমিতি, মিছিল, প্রয়ােজনে বিকল্প সরকার গঠন ও পরিচালনা প্রভৃতি।


🌍গান্ধিজি সত্যাগ্রহের সমালােচনা:
  • অনেক সমালোচক গান্ধীজীর সত্যাগ্রহ কৌশলের বাস্তবতা সম্পর্কে বিরুদ্ধ মত পােষণ করে বলেছেন যে, তার অহিংস আন্দোলন অনেকটাই আবেগতাড়িত এবং একেবারেই অবাস্তব।
  • গান্ধীজীর প্রবর্তিত সত্যাগ্রহ এতটাই আধ্যাত্মিক যে, ঈশ্বরে অবিশ্বাসীদের কাছে এই আন্দোলন একেবারেই গুরুত্বহীন।
  • গান্ধিজি তার সত্যাগ্রহ সম্পর্কে নিজেই সম্পূর্ণরূপে আস্থাশীল ছিলেন না। এই কারণেই বহু আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটিয়েও তা পুনরায় বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
  • ভারতের স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও সত্যাগ্রহের প্রয়ােগ ও সার্থকতা নিয়েও সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছিল। নেতাজি বিশ্বাস করতেন যে, গান্ধিজির সত্যাগ্রহ আন্দোলনের দ্বারা সুসংবদ্ধ ও সশস্ত্র ইংরেজ দুর্গার বিনাশ ঘটানাে সম্ভব নয়।
  • মানবেন্দ্রনাথ রায়ের মতে, গান্ধীজীর অহিংস নীতি জাতীয় সংগ্রামকে দুর্বল করে তুলেছিল।


       গান্ধীজীর সত্যাগ্রহ আন্দোলন বিভিন্ন সমালােচনার সম্মুখীন হলেও এ কথা অনস্বীকার্য যে, গান্ধিজি অহিংসাকে সত্যের সমার্থক বলে মনে করেছেন। কারণ তাঁর কাছে উপায় ও লক্ষ্য পরস্পরের মধ্যে স্থান পালটাতে পারে। সত্যাগ্রহ সম্পূর্ণরূপে অহিংসার ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত বলেই সত্যাগ্রহী সকল হিংসা ও বিদ্বেষ থেকে বিরত থাকে। এককথায় বলা যায়, গান্ধিজির সত্যাগ্রহ মানবমুক্তি সংগ্রামের ঐতিহাসিক আন্দোলনের এক উল্লেখযোগ্য এবং অনন্য প্রয়াস। তাঁর এই সত্যাগ্রহরূপ জাতীয় মুক্তি আন্দোলন ভারতবর্ষের অসংখ্য দরিদ্র ও চেতনাহীন মানুষকে শামিল করেছিল। সুতরাং এ কথা বলা যায় যে, গান্ধিজির এই শান্তিপূর্ণ উপায়ে দাবি আদায়ের পদ্ধতি বর্তমানে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণই শুধু নয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এই আন্দোলন সমভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

১টি মন্তব্য for "গান্ধীর সত্যাগ্রহ: (Gandhi's Satyagraha)."

  1. As of right now, there aren't any options for cryptocurrency banking strategies at Jackpot City. If you’re interested in cryptocurrency 1xbet korea casinos, please a glance at|try} the alternatives to Jackpot City section for additional information. Wagering requirements are the number of occasions would possibly be} anticipated to play through your bonus funds earlier than in a position to|with the power to|having the power to} cash them out. The greater the wagering requirements, the more durable it’ll be to cash these funds out. Despite the excessive Jackpot City’s wagering requirements for the welcome bonus, we nonetheless consider it deserves a relatively excessive score for its bonuses.

    উত্তরমুছুন