মুঘল সাম্রাজ্য: (Mughal Empire).

বাবর(১৫২৬-১৫৩০ খ্রিঃ):

জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর ছিলেন পিতার দিকে তৈমুরলঙ্গের বংশধর। মাতা চেঙ্গিস খাঁর বংশধর। বাবর ছিল চাঘতাই তুর্কি জাতির অন্তর্ভুক্ত মুঘল। তিনি ছিলেন ফরগনা (আফগানিস্থান) রাজের শাসন কর্তা। তাঁর পিতা উমর শেখ মির্জা মারা যাওয়ার পর মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি সম্রাট হন। বাবরকে তার সততার জন্য 'কালান্ডার'বলা হত।
তাকে ভারত আক্রমণের জন্য আহ্বান জানিয়েছিল দৌলত খাঁ লােদী (পাঞ্জাবের সুবাদার),(ইব্রাহিম লােদীর কাকা) এবং রানা সিংহ। 

১৫২৬ খ্রিঃ প্রথম পানিপথের যুদ্ধে ইব্রাহিম লােদীকে পরাজিত করে দিল্লি দখল করেন। ইব্রাহিম লােদী লক্ষাধিক সেনাবাহিনী থাকলেও মাত্র বারাে হাজার সেনা নিয়ে ‘রুমি’ ও ‘তুলঘলমা’ নামক যুদ্ধ পদ্ধতি ব্যবহার করে যুদ্ধে জয়লাভ করে। তার এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল উস্তাদ আলি ও মুস্তফা। 

১৫২৭ খ্রিঃ ঘানুয়ার যুদ্ধে সংগ্রাম সিংহকে পরাজিত করে রাজপুত রাজ্য দখল করেন। এর ফলে বাবরের সাম্রাজ্য শক্তিশালী হয়। এই যুদ্ধের পর তিনি ‘গাজি’ উপাধি ধারণ করেন। 

১৫২৮ খ্রিঃ চান্দ্রেরী যুদ্ধে অন্য রাজপুত রাজা মেদিনিরাই কে পরাজিত করে চান্দেরী দুর্গ দখল করেন।

১৫২৯ খ্রিঃ ঘর্ঘরা যুদ্ধে আফগান রাজা মামুদ লােদীকে (ইব্রাহিম লােদীর ভাই) পরাজিত করে। 

৩০ ডিসেম্বর ১৫৩০ খ্রিঃ আগরার আরামবাগে তার মৃত্যু হয়। তার দেহ নিয়ে যাওয়া হয় আরামবাগ থেকে কাবুলে, সেখানে তাকে সমাধিত করা হয়।


বাবর তুর্কি ভাষায় তার আত্মজীবনী তুহুক–ই –বাবরি লিখেছিলেন এটি ছিল ক্লাসিক সাহিত্য। বাবরকে বলাহত প্রথম রাতের কবি।


হুমায়ুন(১৫৩০-৪০ এবং ১৫৫৫-৫৬ খ্রিঃ): 
হুমায়ুন কাবুলে ১৫০৮ খ্রিঃ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা বাবর এবং মাতা ছিলেন মহিম বেগম। তার তিন ভাই কামরান, হিন্দাল ও আকরিকে বিভিন্ন প্রদেশের শাসন ভার দিয়ে তার সাম্রাজ্যকে সুসংগঠিত করেছিল।দিনপানাহ দিল্লিতে তার দ্বিতীয় রাজধানী স্থাপন করেন।

১৫৩২ খ্রিঃ দৌরাহর যুদ্ধে মামুদ লােদী ও তার অনুগামী আফগানিদের পরাস্ত করেন। এই সময় শেরশাহ সুরি তার শক্তি বৃদ্ধি করে।

১৫৩৯ খ্রিঃ চৌসার কাছে শেরশাহ হুমায়ুনকে আক্রমণ করে এবং চৌসার যুদ্ধে হুমায়ুন ভিষণভাবে পরাজিত হয় এবং আগ্রায় ফিরে আসে। 

১৫৪০ খ্রিঃ কনৌজ বা বিলগ্রামর যুদ্ধে হুমায়ুন শেরশাহের নিকট পরাজিত হয় এবং পারস্যে পালিয়ে যায়। 

১৫ বছর পর ১৫৫৫ খ্রিঃ তিনি পুনরায় ফিরে আসেন এবং ১৫৪৫ খ্রিঃ পারস্য সম্রাটের সহায়তায় কাবুল ও কান্দাহার জয় করেন। 

১৫৫৫ খ্রিঃ তার দক্ষ সেনাপতি বৈরাম খাঁর সহায়তায় প্রথম লাহাের অধিকার করেন এবং ওই বছর ২৩ জুলাই শুর রাজা সিকান্দার শুরকে পরাজিত করে দিল্লি ও আগ্রা দখল করে মুঘল সাম্রাজ্যে পুনপ্রতিষ্ঠা করেন। এবং শুর সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। বৈরাম খাঁ ছিল হুমায়ুনের দক্ষ , বিচক্ষণ ও বাধ্য সহায়ক। তিনি ছিলেন ভারত জয়ের প্রকৃত সহায়ক। হুমায়ুন তাকে তার পরিবারের শ্রেষ্ঠ প্রদীপ বলে অভিহিত করেছিলেন। 

দিল্লি দখলের সাত মাস পর ১৫৫৬ খ্রিঃ পাঠাগারের সিঁড়ি দিয়ে পড়ে হুমায়ুনের মৃত্যু হয়।
হুমায়ুনের, বােন গুলবদন বেগম (বৈমাত্রেয়) হুমায়ুন নামা লিখেছিলেন। 


আকবর(১৫৫৬-১৬০৫ খ্রিঃ):
জালালউদ্দিন মহম্মদ আকবর ছিলেন হুমায়ুনের পুত্র, মাতা ছিলেন হামিদাবানু বেগম। তিনি ১৫৪২ খ্রিঃ সিন্ধু প্রদেশের অমরকোটে জন্মগ্রহণ করেন। বৈরাম খাঁর অভিভাবকত্বে মাত্র ১৪ বছর বয়সে কালানাউর এর দায়িত্ব নেন। 
বৈরাম খাঁর নেতৃত্বে ১৫৫৬ খ্রিঃ দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধে হিমুকে পরাজিত করেন ও দিল্লি পুনরুদ্ধার করে। হিমু ছিল আদিল শাহ শুরির প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপতি। হিমু ছিল দিল্লির শেষ হিন্দু রাজা। 
১৫৫৬-১৫৬০ খ্রিঃ পর্যন্ত আকবরের শাসন কার্য পরিচালনা করত বৈরাম খাঁ।
১৫৬২ খ্রিঃ বৈরাম খাঁর মৃত্যু হয়। 
১৫৬১ খ্রিঃ তিনি মালব আক্রমণ করেন ১৫৬১ থেকে ৬৪ খ্রিঃ পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলে মালব রাজ বাজ বাহাদুরকে পরাজিত করেন । এই সময় তার সেনাপতি ছিল আদম খান ও পীর মহম্মদ।
১৫৬৪ খ্রিঃ মধ্যপ্রদেশের গড় কাটাঙ্গ আক্রমণ করেন এই সময় রাজা ছিলেন রানি দুর্গাবতী। তিনি চিতােরের শরণাপন্ন হয় কিন্তু তিনি পরাজিত হন। আকবর সম্পর্ক স্থাপনের পদ্ধতিতে রাজ্য জয় করেছিলেন।

১৫৬২ খ্রিঃ তিনি অম্বর আক্রমণ করেন এবং রাজা বিহারিমল তার বশ্যতা স্বীকার করলে তিনি বিহারিমলের কন্যাকে বিবাহ করেন এবং বিহারিমলকে জয়পুরের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।

১৫৮৪ খ্রিঃ রাজপুত্র সেলিমের সঙ্গে রাজা ভগবান দাসের কন্যাকে বিবাহ দিয়ে তিনি তার সাম্রাজ্য মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন।

১৫৭২ খ্রিঃ গুজরাট আক্রমণ করেন এবং তৃতীয় মুজাফর শাহকে পরাজিত করেন।

১৬০২ খ্রিঃ আকবর বুলন্দ দরওয়াজা ও ফতেপুর সিকরি তৈরি করেন। 

১৫৭৬ খ্রিঃ হলদিঘাটের যুদ্ধে রাজা মানসিংহ (বিহারিমলের পৌত্র) ও আসিফ খানের নেতৃত্ব রানা প্রতাপকে পরাজিত করে এবং রাজপুত সাম্রাজ্য দখল করে। রাজা মান সিংহের নেতৃত্বে বাংলা, বিহার ও ওড়িশা দখল করে। 

১৫৯১ খ্রিঃ মান্দ্রেশ ও ১৫৯৫ খ্রিঃ বালুচিস্তান , ফান্দাহার তার সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।

১৫৮৬ খ্রিঃ কাশ্মীর ও ১৫৯৩ খ্রিঃ সিন্দ হয় করেন। 

১৫৯৯ খ্রিঃ দৌলতাবাদের সুলতানা চাদ বিবিকে পরাজিত করে দাক্ষিণাত্য দখল করে।

১৬০১ খ্রিঃ তার শেষ যুদ্ধ ছিল আসির গড় দুশ জয়।

 

১৬০৫ খ্রিঃ আকবরের মৃত্যু হয়।

তার সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল কাশ্মীর, সিন্দ, কান্দাহার পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছিল। 
আকবরের নবরত্ন :
আবুল ফজল :- তিনি ছিলেন আকবর নামার লেখক ও আইন – ই আকবর এর প্রচারক। তিনি আকবরের হিসাব রক্ষকও ছিলেন। তিনি মুঘল সেনাবাহিনীর সেনানায়ক ছিলেন। 

ফৈজি :- তিনি ছিলেন ঐতিহাসিক আবুল ফজলের ভ্রাতা। তিনি ছিলেন আকবরের সভাকবি এবং নবরত্নের একজন। তাকে প্রথম নিযুক্ত করা হয় আকবর পুত্রদের শিক্ষক হিসাবে। তিনি লীলাবতীকে(একটি গণিত বই) ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। 

তানসেন :- তিনি হলেন রামতনু পান্ডে। তিনি ছিলেন একজন যন্ত্রবাদক। সে সর্বদা বাজনা নিয়েই থাকতেন। তিনি গােয়ালিয়র হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজা রামচন্দ্রের সভায় বাদক হিসাবে আসায় আকবরের দৃষ্টিগােচর হয়। পরে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

রাজা বীরবল :- বীরবলের আসল নাম মহেশ দাস। তিনি আকবরের সাম্রাজ্যে শাসন কার্যের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন হাস্যরসিক/বিদুষক কবি এবং সংগীতজ্ঞ। তার জ্ঞানে মুগ্ধ হয়ে সম্রাট তার নবরত্ন সভায় তাকে স্থান দিয়েছিলেন। তার ডাকনাম ছিল বীরবল। আকবর তাকে রাজা উপাধি দিয়েছিলেন। 

রাজা টোডরমল :- টোডরমল ছিল আকবরের রাজস্ব বা অর্থমন্ত্রী। তিনি সাম্রাজ্যের উন্নয়নের জন্য সাম্রাজ্যকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছিলেন। তার তৈরি করা পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে পরবর্তী মুঘল সম্রাটরা রাজ্য চালনা করেছিলেন। টোডরমল শের শাহের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। 
১৫৮২ খ্রিঃ আকবর তাকে সেরা উপাধি রাজা ও দেওয়ান – ই – অসরফ দেন।

রাজা মান সিংহ :- মান সিংহ ছিল অম্বরের রাজা। তিনি আকবরের বশ্যতা স্বীকার করে তার সেনাবাহিনীতে যােগ দেন। তিনি ছিলেন আকবরের প্রধান সেনাপতি। পরবর্তীকালে অম্বরের রাজা বিহারিমলের কন্যাকে আকবর বিবাহ করে এবং তার পুত্র রাজা ভগবান দাসকে আকবরের সহকারী হিসাবে নিযুক্ত করেন। মান সিংহ ছিল আকবরের যুদ্ধ জয়ের মূল কান্ডারী। হলদিঘাটের যুদ্ধ, মেবার জয়, কাবুল অধিকার ও ওড়িশা জয়ের প্রধান ভূমিকায় ছিলেন মান সিংহ।

আবদুল রহিম – খান – ই – খান্না :- আবদুল রহিম ছিলেন একজন কবি ও আকবরের সেনাপতিদের মধ্য অন্যতম। তিনি ছিলেন বৈরাম খাঁর পুত্র। বৈরাম খাঁর মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রীকে আকবর তার দ্বিতীয় স্ত্রীরূপে গ্রহণ করেন এবং তার শিশুপুত্র আবদুল রহিমকে আপন পুত্র স্নেহে পালন করেন। তিনি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও ভগবান শ্রীকৃয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন। 

ফকির আজিয়াও দিন :- তিনি ছিলেন আকবরের মুখ্য উপদেষ্টা।

মােল্লা দো পিয়জা :- তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। আকবরের আমলে তার উপদেশ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেত। ১৫৬০-১৫৬২ খ্রিঃ পর্যন্ত তার সাম্রাজ্য যুদ্ধ বিদ্যায় লিপ্ত ছিল এই সময় তিনি ছােটো থাকায় তার ধাতৃমাতা মহাম অঙ্গা বা মামাঙ্গা ছায়াসঙ্গীর মতাে থেকেছে। এবং বৈরাম খাঁ শাসন ভার পরিচালনা করত। 

জাহাঙ্গীর(১৬০৫-১৬২৭ খ্রিঃ): 
আকবর পুত্র সেলিম নুরউদ – দিন – মুহম্মদ – জাহাঙ্গীর নাম ধারণ করে সিংহাসনে বসেন। তিনি অধিকাংশ সময় কাটাতেন লাহােরে। যেখানে তিনি দিলখুসা উদ্যান ও ভবন নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু শীঘ্রই তার বড়ােপুত্র খসরু বিদ্রোহ ঘােষণা করেন। তিনি পঞ্চম শিখ গুরু অর্জুন দেব সিংহকে হত্যা করেন। কারণ গুরু অর্জুন জাহাঙ্গীরের বিদ্রোহী পুত্র খসরুকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। রানা অমর সিংহ (মহারানা প্রতাপের পুত্র) ১৬১৫ খ্রিঃ জাহাঙ্গীর বশ্যতা স্বীকার করেন এবং তার পুত্র করণ সিংহকে মুঘল সাম্রাজ্যের মনসবদার পদে নিযুক্ত করেন। ১৬২২ খ্রিঃ প্যারিস সম্রাট শাহ আব্বাস কান্দাহার দখল করেন এবং মুঘলদের হাতছাড়া হয়। জাহাঙ্গীর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল তিনি শের আফগানির বিধবা স্ত্রী মেহেরুন্নিসাকে ১৬১১ খ্রিঃ বিবাহ করেন। তার নাম দেন নুরজাহান। জাহাঙ্গীর সিংহাসনের পিছনে প্রকৃত শক্তি ছিল তার। তিনি ছিলেন মুঘল আমলে প্রথম সম্রাজ্ঞী যাকে নিজ গুণের জন্য ‘পাদশাহ বেগম’ বলা হত। নুরজাহান তার পিতা মির্জা গিয়াস বেগ, ভ্রাতা আসফ খাঁ ও যুবরাজ খুররম কে নিয়ে চক্র তৈরি করেছিল। যুবরাজ খুররমের সহিত তার ভ্রাতুস্পুত্রী মমতাজের বিবাহ দেন। তিনি তার পিতা মির্জা গিয়াস বেগকে সাত হাজারি ও ভ্রাতা আসফকে ছয় হাজারি মনসবদারের পদে নিযুক্ত করেন। জাহাঙ্গীরের সময় আগ্রাতে ইতিমাদ উদ দৌলার স্মৃতি সৌধ নির্মাণ হয় এবং সেকেন্দার আকবরের সমাধির কাজ শেষ করেন জাহাঙ্গীর। ঐতিহাসিক ক্যান্টেন হকিন্স (১৬০৮-১১) ভারত ভ্রমণের সময় জাহাঙ্গীরের ৪০০ মনসবদার। দেখে তাকে ইংলিশ খান বলেছিলেন। স্যার টমাস রাে ( ১৬১৫-১৯ ) তার রাজত্বকালে ভারতে এসেছিলেন। তার সময়কে মুঘল আমলে স্বর্ণযুগ বলা হয়।
১৬২৭ খ্রিঃ জাহাঙ্গীরের মৃত্যু হয়। 


শাহজাহান (১৬২৮-১৬৫৮ খ্রিঃ): 
তিনি ছিলেন একজন দক্ষ শাসক। 
তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী আগ্রা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তর করেন। তার রাজত্বের প্রথম দিকে বুন্দেল খন্ডের রাজা জুব্বর সিং বিদ্রোহ ঘােষণা করেন এবং দাক্ষিণাত্যের শাসনকর্তা খান জাহান লােদী বিদ্রোহ করেন। তিনি এই বিদ্রোহ দমন করেন। শাহজাহান তার সাম্রাজ্য বিস্তারে সফলতা পেয়েছিল। আহমেদনগর এবং বিজয়পুর তার সাম্রাজ্যের বশ্যতা স্বীকার করে। 
১৬৩৬ খ্রিঃ গােলকুন্ডা মুঘলদের বশ্যতা স্বীকার করে। তিনি উত্তর – পূর্বে রানা প্রতাপ সিংহের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে শ্রীহট্ট জেলা পর্যন্ত সাম্রাজ্য বিস্তার করেন। তার পুত্র ঔরঙ্গজেবকে দাক্ষিণাত্যের সুবেদার নিযুক্ত করেন।
তার আমলে দিল্লি নগরীর নামকরণ করেন শাজাহানবাদ, আগ্রার নামকরণ করা হয় আকবরাবাদ।
মুঘল সম্রাট শাজাহান শাজানাবাদের অভ্যন্তরে সুপ্রসিদ্ধ দুর্গ তৈরি করেন। যমুনা নদীর পূর্বে চারটি বড়াে দরজা, দুটি দরজা ও ২ টি বুরুদ সহ নির্মিত হয় এই দূর্গ। যার নাম ছিল ‘কিলা – ই – মুবারক’ যা লালকেল্লা নামে পরিচিত।
১৮৫৭ খ্রিঃ পর্যন্ত এটাই ছিল মুঘলদের এবং পরবর্তী রাজাদের রাজধানী। 
তার রাজত্ব কালকে মােঘল সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগ বলা হয়। 

তাজমহল:
‘তাজমহল’ হল আগ্রার নিকট ভালােবাসার স্মৃতি সৌধ। শাহজাহান তার প্রিয় পত্নী আর্জুমান্দ বানু। বেগমকে নাম দেওয়া হয়েছিল মমতাজ। তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই সৌধ নির্মাণ করেন। ১৬৩১ খ্রিঃ মমতাজ তার চতুর্থ পুত্রের জন্নের সময় তার মৃত্যু হয়। এই সৌধ তৈরি করতে সময় লেগেছিল ২২ বছর (১৬৩১-১৬৫৩)। ২২ হাজার মিস্ত্রি প্রতিদিন কাজ করে ২২ বছর ধরে এই সৌধ নির্মাণ করছিল। যার মূল কারিগরি বা নকশা তৈরি প্রধান দায়িত্ব ছিল ঈশা খাঁর হাতে। সাদা মার্বেল পাথরের তৈরি দেয়ালে কোরানের বাণী লিখেছিল আমানত খাঁ মিরজা। মীর আব্দুল করিম এবং মুকরিমল খাঁ তাজমহলের আর্থিক দিক দেখভাল করেছিল। এটি ছিল মুঘল আমলের সর্বশ্রেষ্ঠস্থাপত্য নিদর্শন। 

শাহজাহান শ্বেত পাথরের মােতি মসজিদ তৈরি করেছিলেন। এছাড়া তিনি ময়ূর সিংহাসন তৈরি। করেছিলেন যা স্বর্ণদ্বারণ নির্মিত। তার জীবনের শেষ খুব দুঃখের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয় ও তার চারপুত্র দারা, সুজা, ঔরঙ্গজেব ও মুরাদ এর মধ্যে বিদ্রোহ শুরু হয়।


ঔরঙ্গজেব(১৬৫৮-১৭০৭): 
শাহজাহানের চারপুত্র হল দারা সিকো, শাহ সুজা, ঔরঙ্গজেব ও মুরাদ বক্স। এবং তিন কন্যা ছিল জাহান আরা, রােশন আরা এবং গৌহর আরা। এমত অবস্থায় শাজাহান অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তার পুত্রদের বিভিন্ন প্রদেশের দায়িত্ব দেন। দারা ছিলেন দিল্লিতে, শাহ ছিলেন বাংলায়, মুরাদ গুজরাটে এবং ঔরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্যে। ঔরঙ্গজেব দারাসিকোকে ধর্মাট, সামুগড় ও দেওয়াই এর যুদ্ধে পরাজিত করেছিলেন।  
ঔরঙ্গজেব ১৬৫৯ খ্রিঃ জানুয়ারি মাসে খাজোয়ার যুদ্ধে সুজাকে পরাস্ত করেন ও নিহত করেন।
১৬৯০ খ্রিঃ মধ্যে ঔরঙ্গজেবের সাম্রাজ্য পশ্চিমে কাবুল থেকে পূর্বে চট্টগ্রাম ও উত্তরে কাশ্মীর থেকে দক্ষিণে কাবেরী নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। 
ঔরঙ্গজেবের নির্দেশে বাংলার শাসক মীহামুল্লা ১৬৬১ খ্রিঃ কুচবিহার দখল করেন এবং স্থানটির নাম রাখেন আলমগীর নগর। 
১৬৬৩ খ্রিঃ অহােমরাজ জয়ধ্বজ মুঘলদের বশ্যতা স্বীকার করে সন্ধি স্থাপন করেন। শায়েস্তা খাঁ আরাকান রাজকে পরাজিত করে চট্টগ্রাম এবং মগ ও পাের্তুগিজ জলদস্যুদের পরাজিত করে সন্দীপ দখল করেন।
ঔরঙ্গজেব উত্তর – পশ্চিম সীমান্তে ‘অগ্রসর নীতি' অবলম্বন করেন। মীর জামুল্লা পরবর্তী বাংলার গভর্নর নিযুক্ত হন ঔরঙ্গজেবের মাতুল শায়েস্তা খান। তিনি পাের্তুগিজদের দমন করে সন্দীপ (১৬৬৫ খ্রিঃ) এবং আরাকানরাজকে পরাস্ত করে চট্টগ্রাম দখল করেন(১৬৬৬ খ্রিঃ)। 
ঔরঙ্গজেব খাঁটি ইসলামীয় আচরণ বিধি সর্বসাধারণের কাছে প্রচারের জন্য রচনা করেন ফতােয়া – ই – আলমগিরি। 
ঔরঙ্গজেবের রাজনৈতিক ব্যাপারে উলেমা নির্ভরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন যে দুজন মুসলিম অভিজাত তারা হলেন — মহাবৎ খাঁ, মীর্জা লারা।জয়সিংহ, রামসিংহ ও যশােবন্ত সিংহ প্রভৃতি বিখ্যাত রাজপুত সেনাপতি ঔরঙ্গজেবের অধীনে। উচ্চপদে বহাল ছিলেন। 
ঔরঙ্গজেব শিখদের নবম গুরু তেগবাহাদুরকে হত্যা করেছিলেন ( ১৬৭৫ খ্রিঃ )। তাঁর বিখ্যাত উক্তিটি হল  শিরদিয়া সার না দিয়া। 
ঔরঙ্গজেব প্রধানত মারবাড় ও মেবার — এই দুই রাজপুত রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হন। 
ঔরঙ্গজেব দীর্ঘ ত্রিশ বছর রাজপুতানার যুদ্ধে লিপ্ত থাকেন। রাঠোর বীর দুর্গাদাস ছিলেন মারবাড়ের রাজা যশােবন্ত সিংহের অনুচর।


পরবর্তী মুঘল শাসকগণ
(১৭০৭-১৮৫৭ খ্রিঃ):
প্রথম বাহাদুর শাহ(১৭০৭-১২ খ্রিঃ):- 
ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মুঘল সম্রাটরা ছিল পুতুল মাত্র।রাজ্য প্রধান ছাড়া আর কিছুই ছিলেন না। প্রকৃত ক্ষমতার অধিকার যা অমলবর্গের হাতে। ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর তিন পুত্র মুয়াজ্জম, আজম ও কামবক্স ক্ষমতার অধিকার নিয়ে ভ্রাতৃদ্বন্দ্বে লিপ্ত হন। মুয়াজ্জম প্রথম বাহাদুর শাহ  উপাধি নিয়ে সিংহাসনে বসেন ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে। অন্যদিকে আজম নিজেকে ‘সম্রাট’ হিসাবে ঘােষণা করেন এবং কামবক্স ‘দিন পনাহা’ উপাধি নিয়ে সিংহাসন দখল করার চেষ্টা করেন। শেষ পর্যন্ত বাহাদুর শাহ তার ভাইদের পরাজিত করে প্রথম শাহ আলম  উপাধি নেন। ঐতিহাসিক কাফি খাঁ বাহাদুর শাহকে ‘শাহ – ই – বেখবর আখ্যা দেন। তিনি শিবাজির পৌত্র শাহুজি(শম্ভুজির পুত্র) -কে ১৮ বছরের বন্দিদশা থেকে মুক্তি দেন। তিনি মারওয়াড় ও মেবারের স্বাধীনতা স্বীকার করেন। প্রচলিত 'জিজিয়া' কর তুলে দেন। 

জাহানদার শাহ (১৭১২-১৪ খ্রিঃ):-
বাহাদুর শাহের মৃত্যুর পর তার চার পুত্রের মধ্যে জাহানদার শাহ অন্য ভাইদের পরাস্ত করে ১৭১২ খ্রিস্টাব্দে মােঘল সম্রাট হন। ক্ষমতা পেতে তাকে সাহায্য করেছিল অমাত্য (আমির) জুলফিকার খান। দুজন ক্ষমতাশালী অমাত্য আবদুল্লাহ খান ও হুসেন আলি খানের (যারা সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয় নামে পরিচিত) দ্বারা জাহানদার শাহ ক্ষমতাচ্যুত হন।

ফারুকশিয়ার (১৭১৩-১৯ খ্রিঃ) :- 
সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়ের সাহায্যে ফারুকশিয়ার জাহানদারকে হত্যা করে দিল্লির সিংহাসনে বসেন। ফারুকশিয়ার জুলফিকতার খানকে হত্যা করেন। শিখনেতা বান্দা বাহাদুরকে ফরুকশিয়ার ১৭১৬ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুদন্ড দেন।১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ দূত সুরম্যানকে বার্ষিক তিন হাজার টাকার বিনিময়ে বিনাশুল্কে বাণিজ্যের ফরমান দেন। ফারুকশিয়ার সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়ের ক্ষমতা খর্ব করার চেষ্টা করলে, সম্রাট ফারুকশিয়ার নিজেই সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয় দ্বারা নিহত হন।

রফি-উদ-দরজাত:
রফি – উদ – দরজাতকে ১৭১৯ খ্রিস্টাব্দের ২৮ শে ফেব্রুয়ারি দিল্লির সিংহাসনে বসান। এর পর সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয় রফি – উদ – দরজাতকে হত্যা করে।

রফি-উদ-দৌল্লা:
১৭১৯ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে রফি – উদ – দৌলাকে দিল্লির সিংহাসনে বসান। রফি – উদ দৌলা (জুন – নভেম্বর ১৭১৯ খ্রিঃ) – রফি – উদ – দৌলা দ্বিতীয় শাজাহান উপাধি নেন।

মহম্মদ শাহ (১৭১৯-৪৮ খ্রিঃ):- 
সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়ের সহযােগিতায় মহম্মদ শাহ সিংহাসনে বসেন। তিনি উনত্রিশ বছর রাজত্ব করেন। মহম্মদ শাহের পূর্ব নাম ছিল রােশন আকবর। ১৭২০ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ শাহ সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয়কে হত্যা করেন। এই মােঘল সম্রাট কত্থক নৃত্যে পারদর্শী ছিলেন। তিনি শাসনকার্যের থেকে আমােদ – প্রমােদ ও নানাবিধ রঙ্গ তামাশায় মত্ত থাকতেন। সে কারণে মহম্মদ শাহ ইতিহাসে 'রঙ্গীলা বাদশাহ' নামে পরিচিত ছিলেন। তার সময় হায়দ্রাবাদের নিজাম বংশ, মুরশিদকুলি খাঁর নেতৃত্বে বাংলা – বিহার – উড়িষ্যা ও রােহিলাখন্ড স্বাধীন রাজ্য হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন।মহম্মদ শাহের রাজত্বকালে ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে পারস্য সম্রাট নাদির শাহ ভারত আক্রমণ করেন। নাদির শাহ কোহিনুর মণি, ময়ূর সিংহাসন সহ প্রচুর ধনসম্পদ নিয়ে পারস্যে (ইরানে) ফিরে যান। বর্তমানে ময়ূর সিংহাসন লন্ডন মিউজিয়ামে রয়েছে। 

আহম্মদ শাহ (১৭৮৪-৫৪ খ্রিঃ):-
তার সময় আফগানিস্তানের শাসক আহম্মদ শাহ আবদালী প্রথম ভারত আক্রমণ করেন। ১৭৫৪ খ্রিস্টাব্দে মারাঠা নাঠক মলহার রাও হােলকার দিল্লি আক্রমণ করেন। আহম্মদের উজির ( প্রধানমন্ত্রী ) ইমাদ – উল – মুলক আহম্মদকে দুই চোখ অন্ধ করে আজিজুদ্দিনকে সিংহাসনে বসান। 

আজিজুদ্দিন দ্বিতীয় আলমগীর (১৭৫৪-৫৯ খ্রিঃ) :-
ইমাদ – উল – মুলুকের সহযােগিতায় আজিজুদ্দিন দ্বিতীয় আলমগীর ’ নামে মুঘল সম্রাট হন। সিংহাসনে বসেই সম্রাট ইমাদ – উল – মুলুকের প্রধান সেনাপতি বলবাস খানকে হত্যা করেন। এর পর ইমাদ – উল – মুলুক রেগে গিয়ে দ্বিতীয় আলমগীরকে হত্যা করেন এবং তার পুত্র যুবরাজ আলি গহ্বরকে দিল্লির সিংহাসনে বসান। 

আলি গহবর দ্বিতীয় শাহ আলম (১৭৫৯-১৮০৬ খ্রিঃ) :-
আলি গহ্বর দ্বিতীয় শাহ আলম ’ নামে দিল্লির সিংহাসনে বসেন। ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে তিনি হেরে যান। ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় শাহ আলম বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ‘ বাংলা – বিহার – উড়িষ্যার দেওয়ানী অধিকার (রাজস্ব আদায়ের অধিকার) ইংরেজকে দিতে বাধ্য হন। ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশরা দিল্লি অধিকার করে। এর পর মােঘলদের প্রধান ও একমাত্র বাসস্থান। 

দ্বিতীয় আকবর (১৮০৬-৩৭): তিনি রামমােহন রায়কে 'রাজা' উপাধি দেন। তিনি রাজা রামমােহেন রায়কে মুঘল দুত হিসাবে লন্ডন পাঠান। 

দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ (১৮৩৭-৫৭) :-
ইনি ছিলেন শেষ মুঘল সম্রাট। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মহাবিদ্রোহে অংশগ্রহণ করার অপরাধে দ্বিতীয় বাহাদুরকে রেঙ্গনে নির্বাসন দেন ইংরেজরা। তার পরিবারের সবাইকে হত্যা করে ইংরেজরা। শেষ মােঘল সম্রাট রেঙ্গনে নির্বাসিত অবস্থায় ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে দেহত্যাগ করেন। সিপাহি বিদ্রোহ (মহাবিদ্রোহ) -র সময় হিন্দুস্তানের সিপাহিরা দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে 'হিন্দুস্তানের সম্রাট' বলে ঘােষণা করেছিলেন। মােঘল আমলের দরবারী রাজনীতি – মােঘল আমলে আমির ওমরাহদের মধ্যে তিনটি গােষ্ঠী বিদ্যমান ছিল। যথা – ইরানী , তুরানী ও হিন্দুস্তানী।  

মুঘল শাসন ব্যবস্থা :
  • প্রথম অবস্থায় তাদের সাম্রাজ্যকে সুবায় বিভক্ত করা হত। সুবা হল সরকার। 
  • সরকার থেকে পরগনা এবং পরগনা থেকে গ্রাম। 
  • বাবর ও হুমায়ুনের প্রধানমন্ত্রীদের বলা হত ভকিল। কিন্তু ভকিল ছিল বৈরাম খাঁর সময় পর্যন্ত। 
  • উজির ছিল প্রধানমন্ত্রী। 
  • দেওয়ান ছিল ভূমি রাজস্ব মন্ত্রক বা বিভাগ। 
  • মীর বক্সি – ছিল সেনাবাহিনী বিভাগ। 
  • মান – ই – সামান – প্রকৃত গৃহ কর্তা। 
  • কাজি – উল – কাজাট – বিচার বিভাগ, কাজিকে সাহায্য করত মুফতি। 
  • সাদর – উস – সাদর – সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মন্ত্রক। 
  • মুস্তাফি – লেখক। 
  • আমিল – জনসাধারণের বিচারক এবং বিচারব্যবস্থা সহায়ক। 
  • কুয়ানুনগাে – প্রধান হিসাব রক্ষক। 
  • লাম্বারদার – গ্রাম প্রধান। 
  • আকবরে সময় ১৫ টি সুবা ছিল। 
  • ঔরঙ্গজেবের আমলে ২১ টি সুবা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। জমিকে ভাগ করা হয়েছিল খালিমা (শস্যের জমি), জাগির ( উন্নত শস্যর জমি) এবং ইনাম (উন্নত জমি ও বাসস্থান)। 

মুঘল সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর: 

১. কোন যুদ্ধের মাধ্যমে ভারতের সুলতানী সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছিল? 
উত্তরঃ পানিপথের প্রথম যুদ্ধ। 

২. প্রথম পানি পথের যুদ্ধ কখন হয়? 
উত্তরঃ ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে। 

৩. বাবর উপমহাদেশে মুগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা করেন? 
উত্তরঃ ১৫২৬ সালে। 

৪. ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানি পথের প্রথম যুদ্ধে বাবর কাকে পরাজিত করেন? 
উত্তরঃ ইব্রাহিম লোদী। 

৫. কোন যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদী বাবরের কাছে পরাজিত হয়? 
উত্তরঃ পানি পথের প্রথম যুদ্ধে। 

৬. বাবর দিল্লির সিংহাসন অধিকার করেন কখন? 
উত্তরঃ ১৫২৬ সালে। 

৭. ভারতের কোন যুদ্ধে প্রথম কামানের ব্যবহার হয়? 
উত্তরঃ পানিপথের প্রথম যুদ্ধে। 

৮. পানিপথ অবস্থিত কোথায়? 
উত্তরঃ দিল্লির অদূরে। 

৯. পানিপথের যুদ্ধ হয়েছিল কোন নদীর তীরে? 
উত্তরঃ যমুনা। 

১০ . পানি পথের দ্বিতীয় যুদ্ধ কোন সালে সংঘটিত হয়? 
উত্তরঃ ১৫৫৬ সালে। 

১১. কোন যুদ্ধে আকবর দিল্লি জয় করেন? 
উত্তরঃ পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে। 

১২. পানি পথের তৃতীয় যুদ্ধ হয় কত সালে? 
উত্তরঃ ১৭৬১ সালে। 

১৩. তৃতীয় পানি পথের যুদ্ধে কে কাকে পরাজিত করে? 
উত্তরঃ আহমদ শাহ আবদালি মারাঠাদিগকে। 

১৪. মারাঠা শাসকের উপাধি ছিল? 
উত্তরঃ পেশোয়া। 

১৫. ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কে? 
উত্তরঃ বাবর। 

১৬. সম্রাট শাহজাহান মুগল বংশের কততম শাসক? 
উত্তরঃ পঞ্চম । 

১৭. মুঘল সম্রাট আকবরের পিতামহ কে ছিলেন? 
উত্তরঃ বাবর। 

১৮. শাজাহানের কনিষ্ঠ পুত্র কে? 
উত্তরঃ মুরাদ। 

১৯. শেষ মুঘল সম্রাটের নাম কি? 
উত্তরঃ দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ। 

২০. মুঘল সম্রাট বাবরের পুরো নাম কি? 
উত্তরঃ জহিরউদ্দীন মুহম্মদ বাবর। 

২১. ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভারতের কোন প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ‍ছিল? 
উত্তরঃ উত্তর প্রদেশে। 

২২. বাবরি মসজিদ ভারতবর্ষের কোন শহরে অবস্থিত ছিল? 
উত্তরঃ অযোধ্যা। 

২৩. শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহের কবর কোথায়? 
উত্তরঃ ইয়াঙ্গুন। 

২৪. দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে নির্বাসিত করা হয় কোথয়? 
উত্তরঃ রেঙ্গুনে। 

২৫. কোন বিদেশি রাজা ভারতের কোহিনুর মনি ও ময়ুর সিংহাসন লুট করেন? 
উত্তরঃ নাদির শাহ। 

২৬. নাদির শাহ ভারত আক্রমন করেছিলেন কোন সালে? 
উত্তরঃ ১৭৩৯ সালে। 

২৭. আলমগীরনগর কোথায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল? 
উত্তরঃ কুচবিহার। 

২৮. শাহজাহানের কন্যা জাহান আরা কোন ভ্রাতাকে সমর্থন করেছিলেন? 
উত্তরঃ দারা। 

২৯. বাংলার মুসলিম শাসনামলে ‘আবওয়াব’ শব্দটি কোন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো? 
উত্তরঃ খাজনা। 

৩০. ‘তাজমহল’ কে প্রতিষ্ঠা করেছেন? 
উত্তরঃ শাহজাহান। 

৩১. ‘ময়ূর সিংহাসন’ এর নির্মাতা কে? 
উত্তরঃ শাহজাহান। 

৩২. আগ্রার দুর্গের নির্মাতা কে? 
উত্তরঃ সম্রাট শাহজাহান। 

৩৩. মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের সমাধি কোথায়? 
উত্তরঃ লাহোরে। 

৩৪. তাজমহল কোন শতাব্দীতে তৈরি হয়েছিল? 
উত্তরঃ সপ্তদশ। 

৩৫. যে মহিলার সমাধির উপর তাজমহল নির্মিত? 
উত্তরঃ মমতাজ। 

৩৬. ভারতের যে সম্রাটকে ‘আলমগীর’ বলা হতো? 
উত্তরঃ উওরঙ্গজেব। 

৩৭. কখন বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা হয়? 
উত্তরঃ ৬ ডিসেম্বর ১৯৯২। 

৩৮. কোন মুঘল সম্রাট বাংলার নাম দেন ‘জান্নাতবাদ’? 
উত্তরঃ হুমায়ুন। 

৩৯. কোন মুঘল সম্রাট তার শাসনকালে বাঙলায় প্রতিষ্ঠা লাভে ব্যর্থ হয়েছিল? 
উত্তরঃ সম্রাট হুমায়ুন। 

৪০. আকবর দিল্লির সিংহাসনে বসার সময় তার বয়স কত ছিল? 
উত্তরঃ ১৩ বছর। 

৪১. কোন মুঘল সম্রাট প্রথম বাংলা জয় করেন? 
উত্তরঃ আকবর। 

৪২. কোন মুঘল সম্রাটের সময় সাম্রাজ্যের সর্বাপেক্ষা বেশি বিস্তার ঘটে? 
উত্তরঃ আকবর। 

৪৩. বাংলায় মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কে? 
উত্তরঃ আকবর। 

৪৪. কখন সম্রাট আকবর বাংলার শাসনভার গ্রহণ করেন? 
উত্তরঃ ১৫৭৬ সনে। 

৪৫. ‘দীন-ই-ইলাহী’ ধর্ম প্রবর্তন করেন কে? 
উত্তরঃ সম্রাট আকবর। 

৪৬. কোন আমলে বাংলা গজল ও সুফি সাহিত্য সৃষ্টি হয়? 
উত্তরঃ মুঘল আমলে। 

৪৭. টোডরমলের নাম কোন সংস্কারের সঙ্গে জড়িত? 
উত্তরঃ রাজস্ব। 

৪৮. টোডরমর কে? 
উত্তরঃ আকবরের অর্থমন্ত্রী। 

৪৯. ‘জিজিয়া’ কি ছিল? 
উত্তরঃ অমুসলমানদের উপর ধার্য সামরিক কর। 

৫০. সম্রাট আকবরের সমাধি কোথায়? 
উত্তরঃ সেকান্দ্রা। 

৫১. বাংলা সনের প্রবর্তক কে? 
উত্তরঃ সম্রাট আকবর। 

৫২. বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ চালু করেছিলেন কে? 
উত্তরঃ সম্রাট আকবর।

4 মন্তব্যসমূহ

  1. সম্রাট জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর আগে থেকেই দাক্ষিণাত্যে ছিলেন শাহজাহান। জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর আসফ খান তার জামাতা শাহজাহানকে অবিলম্বে সিংহাসনে বসার জন্য বানারসি হিন্দুর মাধ্যমে খবর পাঠান। এদিকে নূরজাহানের উসকানিতে তার জামাতা লাহোরে নিজেকে সম্রাট বলে ঘোষণা করেন।

    প্রজাবর্গের মনোরঞ্জনের জন্য ও শাহজাহান আগ্রা পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত খুসরুর ছেলে দারা বখশকে সিংহাসনে সাময়িকভাবে বসিয়ে রাখেন আসফ খান। বড় সংখ্যক সেনাবাহিনী নিয়ে আসফ খান লাহোরে গিয়ে...
    বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন: https://hasnat208.wordpress.com/2023/11/11/%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9F-%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%A8/

    উত্তরমুছুন
  2. ১৬০৫ সালে সম্রাট আকবরের মৃত্যুর পর পরবর্তী সম্রাট হন নুরুদ্দিন সেলিম জাহাঙ্গীর। সিংহাসনে বসেই...
    বিস্তারিত দেখুন লিংকে: https://hasnat208.wordpress.com/2023/11/05/655/

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. দস্তুর-উল-আমল: https://hasnat208.wordpress.com/2023/11/05/%E0%A6%A6%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%B0-%E0%A6%89%E0%A6%B2-%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%B2/

      মুছুন
  3. ইতিহাসের আরও তথ্য পেতে এই লিংকে যান: https://www.facebook.com/profile.php?id=100064660076728

    উত্তরমুছুন