Skip to content Skip to sidebar Skip to footer

মৌখিক ঐতিহ্য কাকে বলে? মৌখিক ঐতিহ্যের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব আলোচনা করো:


মৌখিক ঐতিহ্য কাকে বলে?

লোকমুখে দীর্ঘদিন ধরে প্রজন্মান্তর শ্রুত হয়ে আসা সংস্কৃতির প্রবাহ হল মৌখিক ঐতিহ্য। অন্যভাবে বলা যায় মৌখিক ঐতিহ্য হল এক ধরনের মৌখিক বার্তা, যা কথা, গান প্রভৃতির মাধ্যমে মুখে মুখে পূর্ববর্তী প্রজন্ম অতিক্রম করে পরবর্তী প্রজন্মে এসে পৌঁছোয়। অতীতের ঘটনা সম্পর্কে মানুষের কণ্ঠস্বর, স্মৃতিকথা, বিভিন্ন সম্প্রদায় ও অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ ও চর্চা করাকেই মৌখিক ঐতিহ্য বলে।


মৌখিক ঐতিহ্যের বৈশিষ্ট্য:
মৌখিক ঐতিহ্যের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
অলিখিত ইতিহাস: মৌখিক ঐতিহ্যগুলি বংশপরম্পরায় মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে এগুলিকে সংগ্রহ করে লিখিত ইতিহাস রচিত হয় ও প্রকাশিত হয়।

চারণকবিদের মাধ্যমে প্রচারিত: চারণকবিদের ছড়া বা গানের মাধ্যমে সমাজের কোনো অঞ্চলের কোনো গাথা মানুষের কাছে প্রচারিত হয়।

সংরক্ষণ: মৌখিক ঐতিহ্যগুলি অডিয়ো টেপ, ভিডিয়ো, টেপ-রেকর্ডারের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয়।

তথ্যমূলক ইতিহাস: কোনো অঞ্চলের ইতিহাস, সংস্কৃতি বা হারিয়ে যাওয়া অতীতকে জানতে মানুষের মুখের কথাই তথ্যমূলক ইতিহাস হিসেবে সংরক্ষিত হয়।

প্রত্যক্ষ উৎস: যাঁরা অতীতের কোনো ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী সাধারণত তাঁরাই মৌখিক ইতিহাস সৃষ্টি করেন।

মৌখিক ঐতিহ্যের গুরুত্ব:
ইতিহাসের উপাদান হিসেবে মৌখিক ঐতিহ্যের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে, যেমন-

আদিম সমাজে গুরুত্ব: মৌখিক ইতিহাস আদিম সমাজে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আদিম মানুষ মৌখিক ইতিহাসের কাহিনিগুলিকে বিশ্বাস করেই মুখে মুখে তাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে কাহিনিগুলিকে পৌঁছে দিয়েছিল।

প্রাথমিক উপাদান: কোনো ঘটনার বিষয়ে ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে প্রাথমিক উপাদান হিসেবে মৌখিক ঐতিহ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

নিম্নবর্গের ইতিহাস: অনেক সময় সমাজের অবহেলিত নিম্নবর্গের কোনো মানুষের দলিল দস্তাবেজ থাকে না। এইসব মানুষের ইতিহাস জানতে গেলে মুখের কথা, কিংবদন্তি, প্রবাদ, স্মৃতিচারণ প্রভৃতির ওপর নির্ভর করতে হয়।

তথ্য সরবরাহ: ইতিহাস পাঠের ক্ষেত্রেও মৌখিক ঐতিহ্য গুরুত্বপূর্ণ। অতীত অভিজ্ঞতাগুলি অলিখিত উপাদান হিসেবে প্রচারিত হয়ে এসেছে মৌখিক ঐতিহ্যের মাধ্যমে। সমাজ, সংস্কৃতির ইতিহাসের উপাদান হিসেবে তাই মৌখিক ঐতিহ্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

         তবে মৌখিক ইতিহাসের আপাত মূল্য থাকলেও তা কখনও সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। কোনো বিশেষ মতাদর্শের প্রতি অনুগত ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে তা থেকে যথার্থ মৌখিক ইতিহাস উদ্ধার করা কষ্টসাধ্য হতে পারে। আর যেহেতু মৌখিক ইতিহাসের কাহিনি মুখে মুখে প্রচারিত হয় সে-কারণে এর মধ্যে সহজেই ভুল তথ্যের অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে। তাই ইতিহাস নির্মাণে মৌখিক ঐতিহ্যকে সতর্কতার সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন for "মৌখিক ঐতিহ্য কাকে বলে? মৌখিক ঐতিহ্যের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব আলোচনা করো:"