Skip to content Skip to sidebar Skip to footer

ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের কারণ আলোচনা করো:


১০৭১ খ্রিস্টাব্দে সেলজুক তুর্কিরা আরবদের থেকে জেরুজালেম দখল করে। ফলে সেখানে খ্রিস্টানদের যাতায়াতে প্রবল অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এই প্রেক্ষাপটে তুর্কিদের হাত থেকে পবিত্র জেরুজালেম পুনরুদ্ধারের জন্য খ্রিস্টান ধর্মযোদ্ধারা ১০৯৬ খ্রিস্টাব্দে ধর্মযুদ্ধ বা ক্রুসেড শুরু করে।

ক্রুসেডের সামাজিক কারণ:
খ্রিস্টান ধর্মান্ধতা:
ইউরোপে একাদশ শতক নাগাদ নর্মান, ম্যাগিয়ার ও ভূমিদাসরা খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করলে একদিকে যেমন খ্রিস্টানদের সংখ্যা বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে তারা হয়ে ওঠে উগ্র সাম্প্রদায়িক। এটি ক্রুসেডের একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক কারণ হিসেবে চিহ্নিত।

দাসত্ব থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা:
এসময় প্রচার করা হয় যে, ভূমিদাসরা ক্রুসেডে যোগদান করলে তাদের দাসত্ব থেকে মুক্তি প্রদান করা হবে। যুদ্ধশেষে মুক্ত জীবনের আশায় ভূমিদাসরা ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধে অংশ নেয়।

পোপ দ্বিতীয় আরবানের ভূমিকা:
১০৭১ খ্রিস্টাব্দে মেনজিকার্টের যুদ্ধে সেলজুক তুর্কিরা বাইজানটাইন সম্রাটকে পরাজিত করে তুরস্ক দখল করে নেয়। এই পরিস্থিতিতে সম্রাট প্রথম আলেক্সিয়াস তুর্কিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পোপ দ্বিতীয় আরবান-এর কাছে সামরিক সাহায্য প্রার্থনা করেন। ১০৯৫ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের ক্লেয়ারমন্ট শহরে এক বিশাল সমাবেশে এক জ্বালাময়ী ভাষণের মাধ্যমে সমগ্র খ্রিস্টান জগৎকে তুর্কিদের বিরুদ্ধে পোপ দ্বিতীয় আরবান ধর্মযুদ্ধের আহ্বান জানান।

ক্রুসেডের অর্থনৈতিক কারণ:
বাণিজ্যিক স্বার্থ:
খ্রিস্টীয় নবম শতকে ক্যারোলিঞ্জীয় সাম্রাজ্যের অবক্ষয় এবং পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের দুর্বলতার ফলে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল মুসলিম হ্রদে পরিণত হয়। একাদশ শতক নাগাদ ইতালীয় বণিকরা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের পশ্চিমাংশ পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয় অর্থাৎ বাণিজ্যিক স্বার্থপূরণের জন্য সমগ্র ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলই খ্রিস্টান বণিকরা পুনরুদ্ধার করতে চেয়েছিল। ফলে বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় কারণের পাশাপাশি বাণিজ্যিক স্বার্থকে যুক্ত করে ক্রুসেডের শক্তি সঞ্চিত হয়েছিল।

আর্থিক উন্নতির স্বপ্ন:
ইউরোপের ধনী অভিজাতরা ক্রুসেডের মাধ্যমে আরও ধনী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এ ছাড়া যুদ্ধের সময় লুঠতরাজের মাধ্যমে ম্যানর প্রভুরা তাদের আয়বৃদ্ধির সম্ভাবনাও দেখতেন।

ক্রুসেডের রাজনৈতিক কারণ:
যে-সমস্ত রাজনৈতিক কারণের জন্য ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ সংগঠিত হয়, সেগুলি হল—
সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার ভূমিকা:
একাদশ শতকের ইউরোপের সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। এ ছাড়া সামন্তপ্রভুদের জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ পুত্রদের মধ্যে সম্পত্তির অধিকার নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষ চলত। ধর্মযাজকগণ এই যুদ্ধশক্তিকে সুকৌশলে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন।

মুসলিম শক্তির উত্থান:
হজরত মহম্মদের মৃত্যুর ১০০ বছরের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে আরব জাতি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চল, স্পেন পর্যন্ত ভূভাগ জয় করে। ফলে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্ট্যান্টিনোপলের নিরাপত্তা সংকটের সম্মুখীন হয়। এরপর তুর্কিদের উত্থান ঘটলে তারা ১০৭১ খ্রিস্টাব্দে কনস্ট্যান্টিনোপলের সম্রাট আলেক্সিয়াস কমনিনাসকে যুদ্ধে পরাজিত করে।এই ঘটনা ইউরোপের খ্রিস্টান জগৎকে আতঙ্কিত ও মুসলিম (তুর্কি) বিদ্বেষী করে তোলে, যার সদ্ব্যবহার করে পূর্ব রোমান সম্রাট তাঁর হৃত অঞ্চল পুনর্দখল করতে চেয়েছিলেন।

ক্রুসেডের ধর্মীয় কারণ:
রোমান চার্চের হৃত মর্যাদা পুনরুদ্ধার:
১০৫৪ খ্রিস্টাব্দে গ্রিক চার্চ ও রোমান চার্চের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটলে পূর্ব ইউরোপের খ্রিস্টান জগতে রোমান চার্চ ও পোপের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়। এই অবস্থায় পূর্বাঞ্চলীয় চার্চের উপর আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে রোমান চার্চের হৃত মর্যাদা পুনরুদ্ধার করতে পোপ দ্বিতীয় আরবান ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের ডাক দেন।

জেরুজালেমের পবিত্রতা রক্ষা:
১০৭১ খ্রিস্টাব্দে সেলজুক তুর্কিগণ জেরুজালেম দখল করে নেয় এবং খ্রিস্টান তীর্থযাত্রীদের উপর নির্যাতন চালায়। ফলে সমগ্র খ্রিস্টান জগৎ এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

      জেরুজালেমের উপর পোপের আধিপত্য বিস্তারের জন্য পোপ দ্বিতীয় আরবান খ্রিস্টান জগতের অসন্তোষকে ব্যবহার করেছিলেন। অধ্যাপক কে আলি মনে করেন যে, জেরুজালেম খ্রিস্টান ধর্মযোদ্ধাদেরলক্ষ্য হলেও পরোক্ষভাবে ইসলামের উপর নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করাও ছিল তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন for "ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের কারণ আলোচনা করো:"