অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা: (The role of the museum).

বাংলা ‘জাদুঘর’ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Museum (মিউজিয়াম)। আর এই মিউজিয়াম’ শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘Mouseion’ (মউসিয়ন) থেকে এসেছে। এর অর্থ হল-'Seat of the Muses' অর্থাৎ শিল্পকলার পৃষ্ঠপােষকদের বসার স্থান। ভিন্ন কথায় শিক্ষাদান গৃহ। 

জাদুঘর হলো এমন এক সংগ্রহশালা যেখানে মানব সমাজের অগ্রবর্তী ও কার্যকলাপ এর বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষণ করে রাখা হয়। অতীতকে জ্ঞানের বিষয় হিসেবে তুলে ধরে জাদুঘর।

জাদুঘরের সংজ্ঞা বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে দিয়েছেন যেমন-
জ্ঞান্দ্রীমোহন দাসের মতে, যে গৃহে অদ্ভুত অদ্ভুত পদার্থসমূহের সংগ্রহ আছে এবং যা দেখে মন্ত্রমুগ্ধ হতে হয়, তাকে জাদুঘর বলে।

পশ্চিমবঙ্গের বাংলা একাডেমি জাদুঘরের সংজ্ঞা হিসেবে বলেছেন- যেখানে প্রাচীন জিনিস সংরক্ষণ করে রাখা হয়, তাকে জাদুঘর বলে।

জাদুঘরের সাধারণ সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে, যেখানে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক,  শিল্পবিষয়ক প্রভৃতি নিদর্শন সংরক্ষণ করে জনসাধারণের উদ্দেশে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়, তাকেই জাদুঘর বলে।



অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকাঃ-
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন- 
'কথা কও কথা কও
অনাদি অতীত অন্তরাতে
বিস্তৃত যত নীরব কাহিনী
সমবেত হয়ে বও।'

তাই এই বাণী অনুযায়ী বলা যায়-
অতীতের উপাদান থেকে বর্তমান কালকে সহজভাবে বোঝা যায়, অতীতের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জীবনকে যাতে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারা যায়, সেই কাজটি করে চলে জাদুঘর।

জাদুঘরের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা হল;
বিবর্তনের ধারাঃ-  জাদুঘর বহু প্রাণীর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহ করে রাখে। যেমন- মানুষের কঙ্কাল, মাথার খুলি, দেহাবশেষ, ডাইনোসর ও বিভিন্ন প্রাণীর দেহ কাঠামো প্রভৃতি সংরক্ষণের মাধ্যমে প্রাণীর বিবর্তন সম্পর্কে আমরা জানতে পারি।

অতীত সম্পর্কে ধারনাঃ- জাদুঘরে সংরক্ষিত বিভিন্ন সময়ের মুদ্রা, শিলালেখ, শিল্পকর্ম, বিভিন্নগ্রন্থ, প্রাচীনতম নিদর্শন যা থেকে অতীতের সমাজ ও সংস্কৃতির পরিচয় জানা যায়।

অতীত ও বর্তমানের যোগসাধনঃ- অতীত ও বর্তমানকে যুক্ত করে জাদুঘর। জাদুঘরের বিভিন্ন চিত্রলিপি, ভাস্কর্য, বস্ত্র, অলংকার, মূর্তি প্রভৃতি প্রত্যক্ষ করে দর্শক ও ঐতিহাসিকরা। যা থেকে মানব সভ্যতার অগ্রগতির পথ বা ঘটনার কথা জানতে পারেন তারা। ফলে রচিত হয় অতীত ও বর্তমানের যোগসুত্র।

ধারাবাহিকতাঃ- জাদুঘরে সংরক্ষিত বস্তুগুলি থেকে মানুষ বুঝতে পারে কিভাবে প্রাচীন সংস্কৃতি থেকে আধুনিক সংস্কৃতির উৎপত্তি হয়েছে। যেমন- প্রাচীন বৈদিক সংস্কৃতি থেকে আধুনিক হিন্দু সংস্কৃতির উৎপত্তি হয়েছে।

গবেষণায় সাহায্যঃ- জাদুঘরে বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য থাকে।  যেগুলি ছাত্র-ছাত্রী ও ঐতিহাসিকদের গবেষণার কাজে সাহায্য করে। এছাড়া জাদুঘরের বিভিন্ন বিষয় থেকে অজানা অনেক তথ্য পাওয়া যায়, যা অতীত পুনর্গঠনে সাহায্য করে। 

মন্তব্যঃ- জাদুঘরে সংরক্ষিত বিভিন্ন বস্তুর দুটি উদ্দেশ্য। 
যথা-
  • পুরাবস্তু সংরক্ষণ।
  • পুরাবস্তু সংক্রান্ত ব্যাখ্যা।
তবে এই দুটি উদ্দেশ্য পূরণের জন্য জাদুঘর নির্মাণ করা খরচসাপেক্ষ ও সময়সাপেক্ষ বিষয়। তাই জাদুঘর গড়ে উঠলে সাধারণ মানুষ অতীত জানার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠবে।

0 মন্তব্যসমূহ