শিলার শ্রেণীবিভাগ | শিলার বৈশিষ্ট্য: (Classification of rocks | Characteristics of rock).

শিলা কাকে বলে?

প্রকৃতিতে প্রাপ্ত এক বা একাধিক খনিজের সমসত্ত্ব বা অসমসত্ত্ব মিশ্রণকে শিলা (Rock) বলে।


শিলার শ্রেণীবিভাগ:
শ্রেণিবিভাগ উৎপত্তি অনুসারে শিলাকে প্রধানত তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় , যথা—
● আগ্নেয়শিলা (গ্রানাইট)।
পাললিক শিলা (চুনাপাথর)।
● রূপান্তরিত শিলা (মার্বেল)।

আগ্নেয়শিলা কাকে বলে?
ভূ-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত আগ্নেয় পদার্থ, যেমন ম্যাগমা এবং ভূপৃষ্ঠে নির্গত লাভা জমাট বেঁধে যে শিলার সৃষ্টি হয়, তাকে বলে আগ্নেয়শিলা (Igneous Rock)।





আগ্নেয় শিলার বৈশিষ্ট্য:
আগ্নেয়শিলার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল:-
● তরল ম্যাগমার কঠিনীকরনের ফলে আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি হয়।
● আগ্নেয়শিলায় কোন স্তর থাকে না বলে, একে অস্তরীভূত শিলা বলা হয়। 
● আগ্নেয় শিলায় জীবাশ্মের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় না।
● আগ্নেয় শিলা কঠিন, অপ্রবেশ্য প্রকৃতির ও সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না।
● আগ্নেয়শিলা সাধারনত স্ফটিক আকার বা কাঁচের মতো হয়ে থাকে। 
● এই প্রকৃতির শিলা গুলি সাধারনত যান্ত্রিক আবহবিকারের দ্বারা আবহবিকার গ্রস্ত হয়ে থাকে।
● আগ্নেয়শিলায় সাধারণত সিলিকাজাতীয় খনিজের প্রাধান্য দেখা যায়।
● মূল্যবান খনিজ যেমন - লৌহ আকরিক, কপার, সোনা, হীরা, ম্যাঙ্গানিজ, অভ্র প্রভৃতি এই আগ্নেয়শিলায় পাওয়া যায়।


আগ্নেয়শিলার শ্রেণিবিভাগ:
উৎপত্তি অনুসারে আগ্নেয়শিলাকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা —
নিঃসারী আগ্নেয়শিলা।
উদবেধী আগ্নেয়শিলা।


নিঃসারী আগ্নেয়শিলা কাকে বলে?
ভূগর্ভস্থ উত্তপ্ত গলিত পদার্থ বা ম্যাগমা ভূ-অভ্যন্তরের অত্যধিক চাপে ভূত্বকের দুর্বল ফাটল দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে তরল লাভারূপে ভূপৃষ্ঠে প্রবাহিত হয়। এই লাভা বাতাসের সংস্পর্শে ঠান্ডা ও কঠিন হয়ে যে শিলার সৃষ্টি করে, বলে নিঃসারী আগ্নেয়শিলা।
উদাহরণ:- ব্যাসল্ট, অবসিডিয়ান প্রভৃতি।

উদ্‌বেধী আগ্নেয়শিলা কাকে বলে?
অনেকসময় ভূগর্ভস্থ উত্তপ্ত তরল ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠে পৌঁছোতে না পেরে ভূগর্ভের ভিতরেই দীর্ঘকাল ধরে ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে কঠিন শিলায় পরিণত হয়। এই ধরনের শিলাকে উদ্‌বেধী আগ্নেয়শিলা বলে।
উদাহরণ:- গ্রানাইট, ডোলেরাইট।

উদ্‌বেধী শিলাকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়,
যথা—
উপপাতালিক শিলা।
পাতালিক শিলা।


উপপাতালিক শিলা কাকে বলে?
ভূ-অভ্যন্তরের কোনো ফাটল বা ছিদ্রপথের মধ্যে ম্যাগমা যখন ধীরে ধীরে শীতল ও কঠিন হয়ে জমাট বেঁধে শিলার সৃষ্টি করে, তখন তাকে উপপাতালিক শিলা।


পাতালিক শিলা কাকে বলে?
ভূ-অভ্যন্তরের একেবারে তলদেশে অবস্থিত ম্যাগমা ধীরে ধীরে শীতল ও কঠিন হয়ে যে শিলার সৃষ্টি করে তাকে পাতালিক শিলা বলে।


পাললিক শিলা কাকে বলে?
বৃষ্টি, তুষারপাত, নদী, বায়ু, হিমবাহ ইত্যাদি প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়কার্যের ফলে পাহাড়, পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। ক্ষয়কার্যের ফলে উৎপন্ন পলি সাগর মহাসাগর, নদী বা হ্রদে স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয় এবং পরবর্তীকালে ওই পলি জমাট বেঁধে যে শিলা গঠিত হয় তাকে পাললিক শিলা (Sedimentary Rock) বলে।
উদাহরণ:- কাদাপাথর, বেলেপাথর, কংগ্লোমারেট, চুনাপাথর, কয়লা, চার্ট।







পাললিক শিলার বৈশিষ্ট্য:- 
পাললিক শিলা স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয় বলে একে স্তরীভূত শিলা বলে।
এই শিলার মধ্যে জীবাশ্ম দেখতে পাওয়া যায়।
এই শিলা বেশ নরম ও হালকা প্রকৃতির হয়।
এই শিলা বেশ ভঙ্গুর।
এই শিলার দানা গুলি হালকা সঙ্ঘবদ্ধ।
পাললিক শিলায় আগ্নেয়শিলার মতো স্ফটিক দেখা যায় না।
পাললিক শিলা কে জৈব শিলা বলে।
পাললিক শিলা কয়লা, খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায়।
বেশির ভাগ পাললিক শিলা সছিদ্র ও প্রবেশ্য হয়ে থাকে।


পাললিক শিলায় জীবাশ্ম দেখা যায় কেন?
জীবাশ্ম কথাটি দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত, যথা - জীব ও অশ্ব। এখানে জীব বলতে উদ্ভিদ ও প্রানী কে এবং অশ্ব বলতে শিলাকে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ জীবদেহ যখন পাথরে পরিনত হয়, তখন তাকে জীবাশ্ম বলে। সমুদ্র ও হ্রদের তলদেশে পাললিক শিলা স্তরে স্তরে সঞ্চিত হওয়ার সময় কোন উদ্ভিদ ও প্রানীর দেহাবশেষ ওই পাললিক শিলার স্তরে চাপা পড়ে যায়। কালক্রমে শিলা গঠনের সময় উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহ জমাট বেঁধে পাথরে পরিনত হয় এবং শিলাস্তরের ওপর তার ছাপ দেখা যায়। হিমালয় পর্বতের বিভিন্ন অংশে শিলার মধ্যে জীবাশ্ম যায়।


পাললিক শিলার শ্রেণীবিভাগ:
উৎপত্তি অনুসারে পাললিক শিলার শ্রেনীবিভাগ
উৎপত্তি অনুসারে পাললিক শিলাকে দুভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে, যথা -
সংঘাত শিলা।
অসংঘাত শিলা।

সংঘাত শিলা কাকে বলে?
বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাব প্রাথমিক আগ্নেয়শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে পাললিক শিলার সৃষ্টি হয়, তাকে সংঘাত শিলা বলে।
উদাহরন:- কাদাপাথর, বেলেপাথর, কংগ্লোমারেট প্রভৃতি।


অসংঘাত শিলা কাকে বলে?
সংঘাত ছাড়া অন্যভাবে সৃষ্ট সমস্ত পাললিক শিলাকে অসংঘাত শিলা বলে।
উদাহরণ:- চুনাপাথর, কয়লা, চার্ট প্রভৃতি।
এই ধরণের পাললিক শিলা প্রধানত জীবদেহ ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট হয়ে থাকে।

রূপান্তরিত শিলা কাকে বলে?
দীর্ঘ সময় ধরে ভূত্বকে প্রচণ্ড চাপ ও তাপের প্রভাবে আগ্নেয়শিলা ও পাললিক শিলা পরিবর্তিত হয়ে সম্পূর্ণ নতুন ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মবিশিষ্ট শিলায় পরিণত হয়। পূর্বের রূপ বা অবস্থার পরিবর্তন হয় বলে, এই শিলাকে পরিবর্তিত বা রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic Rock) বলে।







রূপান্তরিত শিলার বৈশিষ্ট্য:
শিলা রূপান্তরিত হলে কাঠিন্য বৃদ্ধি পায়।
রূপান্তরিত শিলায় পাললিক শিলার মতো জীবাশ্ম দেখা যায় না।
শিলার রূপান্তরিত হলে শিলা মধ্যস্থিত বিভিন্ন খনিজ গুলির পুনবিন্যাস ঘটে।


রূপান্তরিত শিলার শ্রেণীবিভাগ:
রূপান্তরের প্রক্রিয়া অনুসারে রূপান্তরিত শিলার শ্রেনীবিভাগ:-

তাপের প্রভাবে রূপান্তর:- ভূগর্ভস্থ তাপের সংস্পর্শে আসলে আগ্নেয় ও পাললিক শিলার ভৌত রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। 
যেমন:- এই প্রক্রিয়ায় গ্রানাইট থেকে নিস শিলার সৃষ্টি হয়।

চাপের প্রভাবে রূপান্তর:- ভূপৃষ্ঠের ওপরের শিলাস্তর নীচের শিলাস্তরের ওপর অনেক চাপ দেয়। প্রবল চাপের প্রভাবে ভূ-অভ্যন্তরের শিলাসমূহ পরিবর্তিত হয়ে নতুন শিলার রূপ ধারন করে। এই ভাবে কাদাপাথর থেকে শ্লেট শিলার সৃষ্টি হয়।

রাসায়নিক প্রক্রিয়ার ফলে রূপান্তর:- রাসায়নিক ভাবে শিলার মধ্যবর্তী খনিজ গুলি পরিবর্তিত হয়ে শিলার রূপান্তর ঘটে। এই ভাবে কয়লা থেকে গ্রাফাইট শিলার সৃষ্টি হয়।

চাপজনিত চলন:- শিলার ওপর প্রচন্ড চাপ পড়লে শিলা মধ্যস্থিত নমনীয় খনিজ গুলি গতিশীল হয়ে নতুন রূপে সজ্জিত হয়ে ভিন্ন বৈশিষ্ট্য বিশিষ্ট নতুন শিলার উৎপত্তি ঘটায়। 
যেমন:- এই প্রক্রিয়ায় চুনাপাথর থেকে মার্বেল শিলার সৃষ্টি হয়।

বিভিন্ন শিলা থেকে রূপান্তরিত শিলার রূপান্তর:
● গ্রানাইট নিস।
ব্যাসল্ট অ্যাম্ফিবোলাইট।
চুনাপাথর মার্বেল।
বেলেপাথর কোয়ার্টজাইট।
কাদাপাথর শ্লেট।
শেল   শ্লেট।
কয়লা গ্রাফাইট।
স্লেট ফিলাইট।
নিস   শিস্ট। 

0 মন্তব্যসমূহ