ভারতের সুপ্রিমকোর্টের গঠন:
সংবিধানের ১২৪ নং ধারায় সুপ্রিম কোর্টের গঠন সংক্রান্ত আলোচনা করা হয়েছে। বিচারপতিদের কলেজিয়াম কর্তৃক প্রদত্ত প্রস্তাব অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কে নিয়োগ করতে পারেন।
সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের যোগ্যতা:
(ক) ভারতের নাগরিক হতে হবে।
(খ) সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে কমপক্ষে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
(গ) হাইকোর্টের আইনজীবী হিসাবে কমপক্ষে ১০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকা বাঞ্ছনীয়।
সুপ্রিমকোর্টের কার্যকাল ও অপসারণ:
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ৫ বছরের জন্য কিংবা ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। তবে কার্যকালের মেয়াদ শেষ হবার পূর্বে পদত্যাগ করতে পারেন কিংবা রাষ্ট্রপতি তাকে পদচ্যুত করতে পারেন।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলী:
ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্ষেত্র কে আমরা চারটি শ্রেণীতে ভাগ করতে পারি, যথা:
(ক) মূল এলাকা (Original Jurisdiction).
(খ) আপিল এলাকা (Appelate Jurisdiction).
(গ) পরামর্শদান এলাকা (Advisory Jurisdiction).
(ঘ) নির্দেশ, আদেশ বা লেখ জারি করার এলাকায় (Writs Jurisdiction).
(ক) মূল এলাকা (১৩১ নং ধারা):
ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের মূল এলাকাভুক্ত, ক্ষমতা ও কার্যাবলী বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় সংবিধানের ১৩১ নং ধারায় সুপ্রিম কোর্টের মূল এলাকা সংক্রান্ত যে ক্ষমতাটি বর্ণিত হয়েছে তা প্রকৃতভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয়। উল্লেখ্য যে, সুপ্রিম কোর্টের মূল এলাকাভুক্ত ক্ষমতা গুলি হাইকোর্ট অধঃস্তন আদালত গুলি ভোগ করতে পারেনা আইনগত অধিকার সম্পর্কিত বিষয়ে।
(১) কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে এক বা একাধিক রাজ্য সরকারের বিরোধ বাধলে।
(২) কেন্দ্রীয় সরকার ও এক বা একাধিক রাজ্য সরকারের সাথে অন্যান্য কয়েকটি বা একটি রাজ্য সরকারের বিরোধ বাধলে।
(৩) দুই বা ততোধিক রাজ্য সরকারের মধ্যে বিরোধ বাধলে- তার বিচার একমাত্র সুপ্রিম কোর্টের মূল এলাকাতেই সম্পূর্ণ হবে। এই সমস্ত বিরোধ মীমাংসার ক্ষেত্রে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট অনন্য ক্ষমতার অধিকারী। সুপ্রিম কোর্ট সংবিধান ব্যাখ্যার মাধ্যমে এই সমস্ত বিরোধের মীমাংসা করে থাকে। এবং যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক টি নির্ধারণের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ক্ষমতা ভোগ করে।
(খ) আপিল এলাকা (১৩২ নং ধারা):
সুপ্রিম কোর্ট ভারতের চূড়ান্ত আপিল আদালত। অধঃস্তন আদালত বা কর্তৃপক্ষ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা যায়। সুপ্রিমকোর্টে চার ধরনের আপিল মামলা হতে পারে। অর্থাৎ, সুপ্রিম কোর্টের আপিল সংক্রান্ত ক্ষমতা কে সংবিধানে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে ,যথা:
(১) দেওয়ানী আপীল।
(২) ফৌজদারি আপিল।
(৩) সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত আপিল।
(৪) বিশেষ অনুমতি সূত্রে আপিল।
(গ) পরামর্শদান এলাকা:
ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে রাষ্ট্রপতির আইনগত পরামর্শদাতার ভূমিকা পালন করে থাকে। মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের ক্ষেত্রে এই ক্ষমতাটি পরিলক্ষিত হয় না। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শদান কারী ভূমিকাটি কে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়, যথা:
(১) রাষ্ট্রপতি যদি সুপ্রিম কোর্টের কাছে কোনো গুরুত্বপূর্ণ আইনি বিষয়ে পরামর্শ চেয়ে থাকেন, তবে সেক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট পরামর্শ দিতে পারেন আবার নাও দিতে পারেন। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট তার মতামত জানালে ও রাষ্ট্রপতি তা গ্রহণ করতে পারেন অথবা নাও গ্রহণ করতে পারেন।
(২) ভারতীয় সংবিধান চালু হওয়ার পূর্বে সম্পাদিত চুক্তি অঙ্গীকার পত্র, সনদ প্রভৃতির মধ্যে যেগুলি সংবিধান চালু হওয়ার পরেও কার্যকর হয়েছে, সেসব বিষয়ে কোনো বিরোধ দেখা দিলে রাষ্ট্রপতি সে সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের মত চেয়ে পাঠাতে পারে। এবং এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট তার মতামত দিতে বাধ্য থাকেন। সুপ্রিম কোর্ট পরামর্শ দিলেও রাষ্ট্রপতি তা গ্রহণ করতে বাধ্য নন।
(ঘ) নির্দেশ, আদেশ বা লেখ জারি করার এলাকা: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ, আদেশ বা লেখ জারি করার মধ্য দিয়ে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার গুলি কে সংরক্ষিত ও সুরক্ষিত করে থাকে। নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করার চূড়ান্ত দায়িত্বটি ভারতীয় সংবিধানে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। সংবিধানের ৩২ নং ধারার উপর নির্ভর করে সুপ্রিম কোর্ট যে পাঁচটি নির্দেশ বা লেখ জারি করে থাকে তা ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে শেষ রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। অনেকেই ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের এই এই অনন্য ক্ষমতাটিকে তার মূল এলাকার অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করে থাকে। এরূপ গণ্য করার অন্যতম কারণ হলো- মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন কারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট অভিযোগকারী হাইকোর্ট বা অন্যান্য আদালতে আপিল না করলেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে হয়। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট নাগরিকদের মৌলিক অধিকার অক্ষুন্ন রাখতে পাঁচটি নির্দেশ, লেখক বা আদেশ জারি করে থাকেন সেগুলি হল-
এই লিংকে ক্লিক করুন:👉 সাংবিধানিক প্রতিবিধানের অধিকার।
0 মন্তব্যসমূহ