নয়া উদারনীতিবাদ কাকে বলে? নয়া উদারনীতিবাদের প্রকৃতি | নয়া উদারনীতিবাদের বৈশিষ্ট্য:


ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রতি নবোদ্ভূত উদ্বেগ ও মুক্ত বাজারের লক্ষ্যকে সামনে রেখে উদারনীতিবাদের যে পুনরুজ্জীবন ঘটানো হয়, তাকেই নয়া উদারনীতিবাদ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকে নয়া উদারনীতিবাদের আবির্ভাব ঘটে। নয়া উদারনীতিবাদ প্রতিবিপ্লবপন্থী। একে সাবেকি উদারনীতিবাদের রাজনৈতিক-অর্থনীতির আধুনিক বা নবতম সংস্করণ বলা যেতে পারে। তাই অ্যান্ড্রু হেইড বলেছেন, নয়া উদারনীতিবাদ হল আদি রাজনৈতিক অর্থনীতির সাম্প্রতিক সংস্করণ।


নয়া উদারনীতিবাদের প্রকৃতি:
নয়া উদারনীতিবাদ অনেকক্ষেত্রে নয়া ক্ল্যাসিকাল উদারনীতিবাদ হিসেবে বিবেচিত হয়। নয়া উদারনীতিবাদ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অনুপ্রবেশকে নিয়ন্ত্রণের পক্ষপাতী। এইরূপ উদারনীতিবাদের মূল উদ্দেশ্য হল—
  • মুক্ত বাজার অর্থনীতি।
  • একটি সীমিত বা ন্যূনতম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।
মূলত সাবেকি উদারনীতিবাদের মতোই নয়া উদারনীতিবাদের দৃষ্টিভঙ্গি হল নেতিবাচক।

নয়া উদারনীতিবাদ মনে করে রাষ্ট্রের কর্মক্ষেত্রের পরিধি প্রসারিত হলে ব্যক্তির স্বাধীনতা ও ব্যক্তির পছন্দের অধিকারের সীমানা সংকুচিত হবে। তাই তারা মনে করে যে মুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে হলে চাই রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণবিহীন মুক্ত বাজার এবং ব্যক্তির স্বাধীনতা। নয়া উদারনীতিবাদীরা রাষ্ট্রের যূপকাষ্ঠে ব্যক্তিসত্তাকে বলি দিতে চাননি। তবে তাঁরা সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রের বিরোধীও ছিলেন না। তাঁরা সমাজের ভালো প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকার করেছেন।

নয়া উদারনীতিবাদের বৈশিষ্ট্য:
নয়া উদারনীতিবাদের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

সীমিত রাষ্ট্রের ধারণার পুনঃপ্রতিষ্ঠা:
নয়া উদারনীতিবাদীরা (ফ্রেডরিখ হায়েক এবং রবার্ট নজিক) ন্যূনতম রাষ্ট্র বা সীমিত রাষ্ট্রের কথা বলেন, যার একমাত্র কাজ হবে রাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদান এবং ন্যায়সম্মতভাবে অর্জিত নাগরিকদের ব্যক্তিগত সম্পদের তত্ত্বাবধান করা। তাঁদের মতে, নিরাপত্তা রক্ষা, ন্যায়বিচার ও প্রতিরক্ষামূলক কাজ ছাড়া রাষ্ট্রের আর কোনো কাজ থাকতে পারে না। এইজন্য নয়া উদারনীতিবাদীরা রাষ্ট্রকে 'Protective Agency' হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

অবাধ বাণিজ্য নীতি:
নয়া উদারনীতিবাদ মুক্ত বাজার অর্থনীতি ব্যবস্থার নীতিতে বিশ্বাসী। এই মতবাদ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পুঁজির বিশ্বায়ন অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী অবাধ বা অনিয়ন্ত্রিত প্রতিযোগিতার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে। তাঁরা বিশ্বাস করেন মুক্ত বাজার অর্থনীতি প্রাচুর্য, দক্ষতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে পারে।

প্রাকৃতিক অধিকার তত্ত্ব:
নয়া উদারনীতিবাদী ধারার অন্যতম প্রবক্তা রবার্ট নজিক ‘ন্যায়ের হকদারিত্ব তত্ত্ব’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সর্বাপেক্ষা কম শক্তিশালী রাষ্ট্রতত্ত্বের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাঁর মতে, সৎ উপায়ে অর্জিত সম্পত্তির উপর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ন্যায়সঙ্গত অধিকার থাকে। তিনি মনে করেন, নাগরিকদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি অর্জন ও ভোগের অধিকার এবং চুক্তির স্বাধীনতা অলঙ্ঘনীয়।

    পরিশেষে বলা যায়, বর্তমানে বিশ্বায়ন ও মুক্ত বাজার অর্থনীতির যুগে এই মতবাদ যথেষ্ট গতিশীলতা অর্জন করেছে। তবে এর মধ্য দিয়ে সমাজের সকল মানুষের স্বাধীনতা ও বেঁচে থাকার রসদ নিশ্চিত করা যায় কি না তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। 

0 মন্তব্যসমূহ