ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের যে সমস্ত শুভ দিক গুলো ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে ভারতবাসীরা লাভ করে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ইংরেজি শিক্ষা। উনিশ শতকের সূচনায় এদেশের ইংরেজি শিক্ষার সূত্রপাত ঘটে। যার অন্যতম প্রভাব ছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উদ্ভব। ব্রিটিশ শাসিত উনিশ শতকে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত, আর্থিকভাবে মোটামুটি সচ্ছল অবস্থাসম্পন্ন যে শ্রেণীর বিকাশ ঘটে, তারাই 'মধ্যবিত্ত শ্রেণি' নামে পরিচিত।
ব্রিটিশ শাসিত ভারতে চাকুরীজীবী, বণিক, এজেন্ট, আইনজীবী, চিকিৎসক, শিক্ষক, সাংবাদিক প্রভৃতি পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষরা মধ্যবিত্ত শ্রেণি নামে পরিচিত ছিল।
মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভবের কারণ:
উদ্ভবের ভিত্তিতে ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়।
- ভূমিজ মধ্যবিত্ত শ্রেণি।
- শিল্পজ মধ্যবিত্ত শ্রেণি।
- শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি।
করণিক: ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ধারাবাহিক প্রচারের ফলে এক বিরাট প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এই প্রশাসনের কাজ কর্মের জন্য উচ্চপদ গুলিতে ইংরেজি রান্নাঘরে ও নিম্নস্তরের পদগুলিতে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ভারতীয়দের নিয়োগ করা হয়। এইসব মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
আইনজীবী: ইংরেজরা ভারতে পাশ্চাত্যের ধাঁচে আইন ও বিচার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে মামলা মোকাবিলা সংখ্যা প্রচুর বৃদ্ধি পায়। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত প্রচুর ভারতীয় অত্যন্ত লাভজনক আইন পেশায় নিযুক্ত হয়। এইভাবে আমলা উকিল-মোক্তার প্রভৃতি পেশার সঙ্গে যুক্ত ভারতীয়দের উদ্ভব ঘটে।
বাণিজ্যের কাজে যুক্ত কর্মী: ইংরেজরা ভারতে এসেছিল মূলত বাণিজ্য করতে। বাণিজ্যের প্রসার ঘটার ফলে এই বিশাল আকার বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য প্রচুর কর্মচারীর প্রয়োজন হয়। ব্রিটিশ বণিকদের তাদের বাণিজ্যিক কাজকর্ম শেখানোর জন্য শিক্ষিত ভারতীয়দের নিয়োগ করত। এই ভারতীয়রা মধ্যবিত্ত শ্রেণী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
সামরিক বিভাগের কর্মী: ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উন্নতির জন্য ব্রিটিশ সরকার বিশাল সামরিক বাহিনী গড়ে তুলেছিল। সামরিক বিভাগের নিম্ন পদগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ভারতীয়দের নিয়োগ করা হতো। এই সামরিক কর্মীরা মধ্যবিত্ত ভারতীয় নামে পরিচিত।
শিল্পের সঙ্গে ভারতীয় শ্রেণি: ইংরেজরা ভারতের শিল্প ক্ষেত্রে প্রচুর অর্থ নিয়োগ করে। তাদের উদ্যোগে লৌহ কপাট ইঞ্জিনিয়ারিং কাগজ চা-কফি প্রভৃতি শিল্পের বিকাশ ঘটে। এসব কারখানায় কাজ পরিচালনার জন্য প্রচুর ভারতীয়দের নিয়োগ করা হয়, এরা মধ্যবিত্ত শ্রেণি নামে পরিচিত।
সরকারি অফিসের কর্মী: ভারতে ব্রিটিশদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা শুরু হওয়ার পর থেকে এ দেশের সরকারি স্কুল, কলেজ, আদালত, হাসপাতাল প্রভৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কর্মে নিযুক্ত ভারতীয় মানুষ মধ্যবিত্ত নামে পরিচিত।
0 মন্তব্যসমূহ