মিশরের রানী ক্লিওপেট্রার পরিচয়:

মিশরের ইতিহাসে বিস্ময়কর নারী হিসেবে পরিচিত টলেমি বংশের শেষ শাসক ক্লিওপেট্রার সামগ্রিক জীবন, মিশরের শাসন পরিচালনা, প্রণয় কাহিনি সবটাই রহস্যাবৃত। মিশরের ইতিহাসে ক্ষমতাবান নারী শাসক রানি ক্লিওপেট্রার জন্ম হয় ৬৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্দ্রিয়ায়। তিনি মিশরে সপ্তম ক্লিওপেট্রা নামে পরিচিত। কারণ, তাঁর আগে ক্লিওপেট্রা নামধারী আরও ছয় জন নারী শাসকের পরিচয় পাওয়া যায়।


ক্লিওপেট্রার শাসনের সূচনা: সুন্দরী অষ্টাদশী ক্লিওপেট্রা প্রথমদিকে তাঁর পিতার সহশাসক হিসেবে মিশর শাসন করলেও পিতার মৃত্যুর পর তার চেয়ে বয়সে আট বছরের ছােটো ভাই ত্রয়ােদশ টলেমিকে বিবাহ করে মিশরে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। এর কারণ হল, মিশরের প্রচলিত রীতি ছিল কোনাে সঙ্গীর সঙ্গে যৌথভাবে দেশশাসন করতে হবে।

ক্লিওপেট্রার একাধিপত্য স্থাপন: এয়োদশ টলেমির সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছেদের পর ক্লিওপেট্রা মিশরের সরকারি দলিল ও রাজকীয় নথি থেকে এয়োদশ টলেমির নাম বাদ দেন এবং নিজ নামাঙ্কিত মুদ্রার প্রচলন করেন। ক্লিওপেট্রার এই সকল পদক্ষেপের ফলে রোম ও গ্রিসের সেনাপ্রধানরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এই সুযোগে ৪৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিশরের সভাসদ পথিনাস এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্লিওপেট্রাকে ক্ষমতাচ্যুত করে পুনরায় এয়োদশ টলেমিকে সিংহাসনে বসান।

জুলিয়াস সিজারের মিশর আক্রমণ: এর কিছুদিনের মধ্যে জুলিয়াস সিজার বিশাল সৈন্যবাহিনী-সহ মিশর আক্রমণ করেন। ত্রয়োদশ টলেমি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও অসফল হন। এসময় ক্লিওপেট্রা শাসনক্ষমতা পুনরুদ্ধারের আশায় সিজারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ক্লিওপেট্রার রূপে মুগ্ধ হয়ে সিজার তাঁকে বিয়ে করেন।

ক্লিওপেট্রার মিশরে প্রত্যাবর্তন: খ্রিস্টপূর্ব ৪৪ অব্দে ব্রুটাস কর্তৃক জুলিয়াস সিজারের আকস্মিক মৃত্যুর ফলে ক্লিওপেট্রার একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার প্রয়াস প্রায় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এইরূপ পরিস্থিতিতে তিনি মিশরে প্রত্যাবর্তন করে চতুর্দশ টলেমির সঙ্গে যুগ্মভাবে মিশর শাসন করতে শুরু করেন।

ক্লিওপেট্রা ও মার্ক অ্যান্টনির বিবাহ: আনুমানিক ৪১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ সিজারের সেনাপতি মার্ক অ্যান্টনি পারস্য আক্রমণের সুবাদে ক্লিওপেট্রার সঙ্গে পরিচিত হন এবং তাকে বিবাহ করেন।

অ্যাক্টিয়ামের যুদ্ধ: তবে অ্যান্টনি-ক্লিওপেট্রার সুখের দিন স্থায়ী হয়নি। অ্যান্টনির প্রথম স্ত্রী অক্টাভিয়ার ভাই অগাস্টাস সিজার অ্যান্টনির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে অ্যাক্টিয়ামের যুদ্ধে (৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) অ্যান্টনি পরাস্ত হন এবং ক্লিওপেট্রার সঙ্গে মিশরে প্রত্যাবর্তন করেন। কিন্তু ৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অগাস্টাস মিশর আক্রমণ করলে যুদ্ধে পরাস্ত অ্যান্টনি আত্মহত্যা করেন।

ক্লিওপেট্রার মৃত্যু: এরপর ক্লিওপেট্রা ৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শোকে, দুঃখে মিশরীয় গোখরো বা অ্যাসপ নামক বিষধর সাপের ছোবলে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন বলে অনেকে মনে করেন৷

0 মন্তব্যসমূহ