মনোবিজ্ঞান কাকে বলে? শিক্ষামনোবিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য | Class 11 Education Notes.
মানুষ জন্মের পর থেকেই শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এবং বুদ্ধিগতভাবে ক্রমাগত বিকশিত হয়। জীবন জুড়ে শেখার প্রক্রিয়ার সঙ্গে এই বিকাশ ও পরিবর্তন সরাসরি সম্পর্কিত। শিক্ষার ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞান অপরিহার্য, কারণ এটি শিক্ষার্থীর মানসিক প্রক্রিয়া, চিন্তাভাবনা, অনুভূতি এবং আচরণ বোঝার একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।
একজন শিক্ষক যদি শিক্ষার্থীর মনকে বোঝে এবং সেই অনুযায়ী শিক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করে, তবে শিক্ষার্থীর শেখার আগ্রহ ও সাফল্য অনেক বেশি হয়।
মনোবিজ্ঞান কাকে বলে?
“মনোবিজ্ঞান” শব্দটি দুটি অংশে গঠিত — মন এবং বিজ্ঞান। অর্থাৎ এটি মনের বিজ্ঞান, যা মানুষের চিন্তা, অনুভূতি, অভিজ্ঞতা এবং আচরণের বৈজ্ঞানিক অধ্যয়ন করে।
মনোবিজ্ঞান সংজ্ঞা:
প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী উইলিয়াম জেমস বলেন—
“Psychology is the science of mental life, both of its phenomena and their conditions.”
অর্থাৎ, মনোবিজ্ঞান হলো মানসিক জীবনের ঘটনা এবং তাদের কারণসমূহের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ। আধুনিক দৃষ্টিতে, এটি কেবল মনের কাজ নয়, বরং মানুষের আচরণের বৈজ্ঞানিক অধ্যয়ন।
শিক্ষামনোবিজ্ঞান কী?
মনোবিজ্ঞানের একটি বিশেষ শাখা হলো শিক্ষামনোবিজ্ঞান (Educational Psychology)।
এটি শিক্ষার প্রক্রিয়া ও শিক্ষার্থীর মানসিক অবস্থা, শেখার ক্ষমতা, মনোভাব এবং আচরণকে বিশ্লেষণ করে।
শিক্ষামনোবিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য হলো —
- শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ বোঝা।
- শেখার ধরণ ও গতির সঙ্গে মানিয়ে শিক্ষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করা।
- শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা এবং শিক্ষার্থীর আচরণ ও ব্যক্তিত্বের উন্নয়ন ঘটানো।
শিক্ষামনোবিজ্ঞানের সাহায্যে শিক্ষক পাঠ্যক্রম পরিকল্পনা, শেখার কৌশল নির্বাচন এবং শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন আরও কার্যকরভাবে করতে পারেন।
শিক্ষামনোবিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য:
বৈজ্ঞানিক অধ্যয়নভিত্তিক:
শিক্ষামনোবিজ্ঞান তথ্য-নির্ভর। এটি পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা, সাংকেতিক বিশ্লেষণ এবং গবেষণার মাধ্যমে শিক্ষা সম্পর্কিত সিদ্ধান্তে পৌঁছায়।
শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক:
শিক্ষামনোবিজ্ঞান শিক্ষার্থীর বয়স, মানসিক গঠন, আগ্রহ এবং দক্ষতার উপর ভিত্তি করে কাজ করে। এটি নিশ্চিত করে যে শিক্ষণ পদ্ধতি শিক্ষার্থীর মানসিক প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
আচরণনির্ভর:
শিক্ষামনোবিজ্ঞান মূলত শিক্ষার্থীর আচরণ বিশ্লেষণ করে। শিক্ষার্থীর মনোযোগ, শেখার অভ্যাস, ভুল সংশোধন এবং অনুপ্রেরণার ধারা পর্যবেক্ষণ করে শিক্ষণ পরিকল্পনা করা হয়।
উন্নয়নমূলক দৃষ্টিভঙ্গি:
শিশু ও কিশোরদের বিকাশ বিভিন্ন স্তরে ঘটে। শিক্ষামনোবিজ্ঞান এই স্তরগুলোকে বুঝে শিক্ষার কৌশল প্রয়োগ করে। এটি শিক্ষার্থীর মানসিক, শারীরিক ও সামাজিক বিকাশকে সমর্থন করে।
প্রয়োগমূলক বিজ্ঞান:
শিক্ষামনোবিজ্ঞান কেবল তত্ত্ব নয়, এটি শিক্ষণ, পাঠ্যক্রম, মূল্যায়ন এবং পরামর্শদানে প্রয়োগযোগ্য। শিক্ষক এই জ্ঞান ব্যবহার করে শিক্ষার মান ও কার্যকারিতা বাড়াতে পারেন।
ব্যক্তিভেদ স্বীকার করে:
প্রত্যেক শিক্ষার্থী আলাদা। শিক্ষামনোবিজ্ঞান শিক্ষার্থীর পার্থক্যকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষণ পদ্ধতি তৈরি করে। এটি শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত এবং মানসিক প্রয়োজনের সঙ্গে মানিয়ে চলে।
শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষামনোবিজ্ঞানের প্রয়োগ:
- পাঠ্যক্রম ও শিক্ষণ কৌশল নির্ধারণ।
- শিক্ষার্থীর মানসিক সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধান।
- শিক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ ও মান বৃদ্ধি।
- শিক্ষার্থীর আচরণ ও ব্যক্তিত্বের বিকাশ।
- শেখার আগ্রহ ও মনোযোগ বৃদ্ধি।
উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন শিশু গণিত শেখার ক্ষেত্রে মনোযোগ দিতে না পারে, শিক্ষক শিক্ষামনোবিজ্ঞানের জ্ঞান ব্যবহার করে তার শেখার পরিবেশ পরিবর্তন বা উপযুক্ত প্রয়োগ পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।
উপসংহার:
মনোবিজ্ঞান মানুষের মনের কার্যপ্রক্রিয়ার বিজ্ঞান, আর শিক্ষামনোবিজ্ঞান হলো শিক্ষার ক্ষেত্রে সেই বিজ্ঞানের প্রয়োগ। একজন দক্ষ শিক্ষক যদি শিক্ষার্থীর মন বুঝে শিক্ষাদান করেন, তবে শিক্ষা কেবল তথ্য প্রদান নয়, বরং শিক্ষার্থীর মানসিক ও ব্যক্তিগত বিকাশে সহায়ক হয়ে ওঠে। শিক্ষামনোবিজ্ঞানই আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রাণস্বরূপ।
Post Comment