সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠার পটভূমি: background-of-all-india-muslim-league.

সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠার পটভূমি: background-of-all-india-muslim-league.

ভূমিকা:

ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের এক বিশেষ পর্যায়ে মুসলিম সমাজের একাংশ নিজেদের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক সংগঠনের প্রয়োজন অনুভব করেছিল। এরই ফলস্বরূপ ১৯০৬ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় “সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ” (All India Muslim League)। এই দলের প্রতিষ্ঠা ছিল ব্রিটিশ নীতির পরোক্ষ ফল এবং মুসলমান অভিজাত শ্রেণির রাজনৈতিক আত্মরক্ষার প্রচেষ্টা।

ব্রিটিশ শাসনের প্রভাব:

১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের পর মুসলমানরা ব্রিটিশদের চোখে সন্দেহভাজন হয়ে পড়ে। সরকারী চাকরি, প্রশাসন ও শিক্ষাক্ষেত্রে তারা ক্রমে পিছিয়ে পড়ে। অপরদিকে হিন্দুরা ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা লাভ করে। ফলে মুসলমান সমাজে এক ধরণের বঞ্চনার বোধ ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়।

আলীগড় আন্দোলন ও স্যার সৈয়দ আহমদের ভূমিকা:

মুসলমান সমাজকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ও রাজনৈতিকভাবে সচেতন করার ক্ষেত্রে স্যার সৈয়দ আহমদ খান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। তিনি ১৮৭৫ সালে আলীগড়ে মহমেডান অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তবে তিনি মনে করতেন যে, হিন্দু ও মুসলমানের রাজনৈতিক লক্ষ্য আলাদা, তাই মুসলমানদের উচিত আলাদা রাজনৈতিক সত্তা গঠন করা। এই ভাবধারাই পরে মুসলিম লীগের ভিত্তি গড়ে দেয়।

বঙ্গভঙ্গ (১৯০৫) ও মুসলমান সমাজের প্রতিক্রিয়া:

লর্ড কার্জনের দ্বারা বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ববঙ্গে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ সৃষ্টি হয়। হিন্দু সমাজ এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেও মুসলমান সমাজ তা স্বাগত জানায়। হিন্দু সমাজের আন্দোলন মুসলমানদের কাছে তাদের রাজনৈতিক দমনচেষ্টা বলে মনে হয়। এই বিভাজন মুসলিম সমাজকে আলাদা রাজনৈতিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করায়।

ইংরেজদের বিভাজননীতি (Divide and Rule Policy):

ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ক্রমবর্ধমান শক্তিকে ভয় পেয়ে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। এজন্য সরকার মুসলমান নেতাদের উৎসাহ দেয় আলাদা রাজনৈতিক সংগঠন গঠনের জন্য। সরকারী সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলিম লীগের জন্ম ঘটে।

শিক্ষিত মুসলমান অভিজাত শ্রেণির স্বার্থরক্ষা:

মুসলমান জমিদার, উচ্চবিত্ত ও শিক্ষিত শ্রেণি কংগ্রেসের গণআন্দোলনে নিজেদের স্বার্থ বিপন্ন মনে করেছিল। তারা মনে করত, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় মুসলমানদের দাবি উপেক্ষিত হবে। তাই তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় আলাদা রাজনৈতিক সংগঠনের প্রয়োজন অনুভব করে।

ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহর ভূমিকা:

নবাব সলিমুল্লাহ মুসলমান রাজনীতির অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনের অধিবেশনে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ গঠিত হয়। এই সভাতেই সিদ্ধান্ত হয় যে, মুসলমানদের রাজনৈতিক অধিকার রক্ষার জন্য আলাদা সংগঠন থাকা প্রয়োজন।

উপসংহার:

সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের জন্ম ছিল এক বিশেষ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে — ব্রিটিশ শাসনের বিভাজননীতি, হিন্দু-মুসলমান বিরোধ, এবং মুসলমান সমাজের নিরাপত্তাহীনতার ফলস্বরূপ। প্রথমদিকে এই সংগঠনের লক্ষ্য ছিল মুসলমানদের রাজনৈতিক অধিকার রক্ষা ও সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা। কিন্তু পরবর্তীকালে এই সংগঠনই ভারত বিভাজন ও পাকিস্তান সৃষ্টির পথে নেতৃত্ব দেয়।

GKpathya.in হল সাধারণ জ্ঞান, সমসাময়িক বিষয় ও পরীক্ষামুখী তথ্যের ভাণ্ডার। আমি সুকান্ত দাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে এম.এ এবং পেশায় শিক্ষক। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ও শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে সহায়তা করার জন্য সহজ ও নির্ভরযোগ্য কনটেন্ট শেয়ার করি।

Post Comment

error: Content is protected !!