সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ (United Nations): প্রতিষ্ঠার ইতিহাস, উদ্দেশ্য, নীতি ও গুরুত্ব:
প্রস্তাবনা:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের পর মানবসভ্যতা উপলব্ধি করল যে — স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা ছাড়া সভ্যতার ভবিষ্যৎ নেই। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত চলা এই যুদ্ধ মানবজাতিকে চরম বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছিল। সেই প্রেক্ষাপটে বিশ্বশান্তি রক্ষার লক্ষ্যে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ (United Nations) বা জাতিসংঘ (UNO)।
আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষার ধারণার সূচনা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বশান্তি রক্ষার চিন্তা প্রথম আকার নেয়।
১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে ইংল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিরা লন্ডন ঘোষণা পত্রের মাধ্যমে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করেন।
তাদের উদ্দেশ্য ছিল — ভবিষ্যতে এমন একটি সংঘ গঠন করা, যা যুদ্ধ প্রতিরোধ ও শান্তি রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
আটলান্টিক সনদ (Atlantic Charter), ১৯৪১
এই একই বছর ৯ই আগস্ট মার্কিন রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল আটলান্টিক মহাসাগরের বুকে ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ প্রিন্স অফ ওয়েলস-এ মিলিত হন।
সেখানে তারা পৃথিবীতে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আটটি মূলনীতির উপর ভিত্তি করে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যা পরবর্তীকালে “আটলান্টিক সনদ” নামে পরিচিত হয়।
আটলান্টিক সনদের প্রধান নীতি
- সকল জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার থাকবে।
- ভূখণ্ড দখলের মাধ্যমে রাষ্ট্র সম্প্রসারণ অগ্রহণযোগ্য।
- আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে স্বাধীনতা থাকবে।
- সব জাতির নিরাপত্তা ও উন্নতি নিশ্চিত করতে সহযোগিতা।
- দারিদ্র্য ও ভয় থেকে মুক্তি।
- আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ।
- সমুদ্রপথের স্বাধীনতা।
- স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি।
এই সনদেই ভবিষ্যৎ জাতিপুঞ্জের বীজ নিহিত ছিল।
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ঘোষণাপত্র, ১৯৪২
আটলান্টিক সনদের ধারাবাহিকতায় ১৯৪২ সালের ১লা জানুয়ারি ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ২৬টি দেশ একত্রিত হয়।
তারা ‘Declaration by the United Nations’ নামক ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে, যেখানে বলা হয় — সব রাষ্ট্র ফ্যাসিবাদ ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথভাবে লড়বে এবং ভবিষ্যতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একসঙ্গে কাজ করবে।
এখানেই প্রথম “United Nations” নামটি সরকারি স্বীকৃতি পায়।
ডাম্বারটন ওকস সম্মেলন, ১৯৪৪
পরবর্তী পর্যায়ে ১৯৪৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির নিকটস্থ ডাম্বারটন ওকস-এ এক গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এই সম্মেলনে চারটি প্রধান দেশ — যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন — জাতিপুঞ্জের ভবিষ্যৎ কাঠামো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে।
আলোচিত মূল বিষয়সমূহ:
- ভবিষ্যৎ সংস্থার উদ্দেশ্য ও নীতি
- সদস্যপদের শর্ত
- নিরাপত্তা পরিষদের কাঠামো
- সাধারণ পরিষদের ভূমিকা
- আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের গঠন
এই সভাতেই জাতিপুঞ্জের সাংগঠনিক রূপরেখা নির্ধারিত হয়।
সানফ্রান্সিসকো সম্মেলন ও জাতিপুঞ্জের জন্ম (১৯৪৫)
১৯৪৫ সালের এপ্রিল মাসে সানফ্রান্সিসকো শহরে বিশ্বের ৫০টি দেশের প্রতিনিধিবৃন্দ একত্রিত হয়ে জাতিপুঞ্জের সংবিধান রচনায় অংশ নেন।
এই সংবিধানটি “United Nations Charter” নামে পরিচিত হয়।
২৬ জুন ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ৫০টি রাষ্ট্র এতে স্বাক্ষর করে এবং পরবর্তীতে পোল্যান্ড যোগ দিয়ে স্বাক্ষরকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫১।
অবশেষে, ২৪ অক্টোবর ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে জাতিপুঞ্জ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
সেই দিনটিই আজও পালিত হয় জাতিপুঞ্জ দিবস (United Nations Day) হিসেবে।
জাতিপুঞ্জের উদ্দেশ্য
জাতিপুঞ্জের মূল উদ্দেশ্য ছিল:
- আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা।
- রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা।
- অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
- মানবাধিকারের সুরক্ষা ও মর্যাদা রক্ষা।
- আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
জাতিপুঞ্জের প্রধান অঙ্গসমূহ
জাতিপুঞ্জের মোট ছয়টি প্রধান অঙ্গ রয়েছে —
সাধারণ সভা (General Assembly):
জাতিপুঞ্জের সনদের চতুর্থ অধ্যায়ে ৯ থেকে ২২ নং ধারায় সাধারণ সভা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। জাতিপুঞ্জের কেন্দ্রীয় আলোচনাস্থল হল সাধারণ সভা। সংগঠনের সকল সদস্যের সমান মর্যাদায় প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ এই সংস্থার রয়েছে। একে প্রতীকী অর্থে Town meeting of the World বলা হয়। এই সভার বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১৯৩। প্রত্যেক সদস্যরাষ্ট্র ৫ জন করে প্রতিনিধি সাধারণ সভার অধিবেশনে পাঠাতে পারে। সাধারণ সভায় ১ জন সভাপতি ও ২১ জন সহ-সভাপতি থাকেন। সনদে উল্লিখিত যে – কোনো বিষয়, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, নিরস্ত্রীকরণ, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়সমূহ নিয়ে সাধারণ সভা আলোচনা করতে পারে। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে সাধারণ সভার অধিবেশন বসে। এই অধিবেশনে সদস্যরাষ্ট্রগুলি স্বচ্ছন্দে তাদের মতপ্রকাশ করতে পারে।
নিরাপত্তা পরিষদ (Security Council):
জাতিপুঞ্জের সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ও আলোচিত অঙ্গ বা সংস্থা হল নিরাপত্তা পরিষদ। এই পরিষদের উপরই শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রধান দায়িত্ব অর্পিত রয়েছে (Primary responsibilities for the maintenanceof international Peace and Security)। জাতিপুঞ্জের সনদের পঞ্চম অধ্যায়ে ২৩ থেকে ৩২ নং ধারায় নিরাপত্তা পরিষদের গঠন ও কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১৫। এর মধ্যে স্থায়ী সদস্যের সংখ্যা ৫ এবং অস্থায়ী সদস্যের সংখ্যা ১০।
স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলি হল— আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া এবং চিন।
১০ টি অস্থায়ী সদস্যের মধ্যে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলির জন্য নির্দিষ্ট থাকে ৫ টি আসন, পশ্চিম ইউরোপ ও অন্যান্য দেশ থেকে ২ টি, লাতিন আমেরিকা থেকে ২ টি এবং পূর্ব ইউরোপ থেকে ১ টি অস্থায়ী সদস্য নির্বাচিত হয়।
নিরাপত্তা পরিষদ সারা বছরই যে -কোনো সময় যে -কোনোদিন বৈঠক আহ্বান করতে পারে। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যগণ বছরে একবার নিউ ইয়র্কে (এপ্রিল) ও একবার জেনেভাতে (জুলাই) অধিবেশন আহ্বান করে। এই অধিবেশনে পরিষদের অধীন সকল কমিশন ও কমিটির কার্যবিবরণী আলোচনা করা হয়। নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান কর্তব্য হল বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ (Economic and Social Council):
জাতিপুঞ্জের সনদের দশম অধ্যায় ৬১ থেকে ৭২নং ধারায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এর বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৫৪। প্রতি বছর ১৮ জন সদস্য অবসর গ্রহণ করেন এবং ১৮ জন নতুন সদস্য নির্বাচিত হন। প্রত্যেক সদস্য ৩ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। তবে কার্যকাল শেষ হওয়ার পর তাঁরা পুনর্নির্বাচিত হতে পারেন।
এই সংস্থার প্রধান কর্তব্য হল— আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সমীক্ষা করে সাধারণ সভা, নিরাপত্তা পরিষদ বা সংশ্লিষ্ট বিশেষ সংস্থাসমূহের কাছে নিজের সুপারিশ পেশ করা।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ নিজের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য অনেক কমিটি ও কমিশন গঠন করেছে।
কমিটিগুলির মধ্যে অন্যতম হল
- Negotiation Committee.
- Programme Committee.
- Committee on Non-Governmental Organisation.
- Industrial Development Committee.
অপরদিকে, কমিশনের মধ্যে অন্যতম হল
- Functional Commission.
- Regional Economic Commission.
অছি পরিষদ (Trusteeship Council):
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদের ত্রয়োদশ অধ্যায় ৮৬ থেকে ৯১ নং ধারার মধ্যে আন্তর্জাতিক অছি ব্যবস্থা সম্পর্কিত নিয়মকানুনগুলি আলোচিত হয়েছে। অনুন্নত দেশগুলিকে স্বায়ত্তশাসনের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য ১৫ জন সদস্যবিশিষ্ট যে পরিষদ গঠনের ব্যবস্থা রয়েছে, তাই অছি পরিষদ নামে পরিচিত। অনগ্রসর জাতিসমূহের তত্ত্বাবধানে কাজ করে এই অছি পরিষদ।
অছি পরিষদ তিন প্রকার সদস্য নিয়ে গঠিত —
- অছি অঞ্চলগুলির প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্র।
- নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যবৃন্দ।
- সাধারণ সভা কর্তৃক নির্বাচিত সদস্যগণ।
অছি পরিষদ মূলত অছি অঞ্চলের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ের প্রতিবেদন সাধারণ সভার কাছে পেশ করে।
আন্তর্জাতিক বিচারালয় (International Court of Justice):
সনদের ২ নং ধারায় আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের গঠন সম্পর্কে বলা হয়েছে। সনদের শুনং ধারানুসারে ১৫ জন বিচারপতিকে নিয়ে এই আদালত গঠিত হয়। বিচারপতিগণ ৯ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। প্রতি ৩ বছর অন্তর ৫ জন বিচারপতি অবসর গ্রহণ করেন এবং ৫ জন নতুন বিচারপতি নিযুক্ত হন। আন্তর্জাতিক আদালত প্রধানত আন্তর্জাতিক চুক্তি ও আইনের ব্যাখ্যা, আন্তর্জাতিক দায়দায়িত্ব লঙ্ঘন, আন্তর্জাতিক দায়িত্বভঙ্গের ক্ষতিপূরণের পরিমাপ নির্ধারণ প্রভৃতি কর্তব্য পালন করে থাকে।আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের কর্মপরিধিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়, যথা—
- স্বেচ্ছামূলক এলাকা (আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের কাছে বিবদমান পক্ষগুলির সম্মতিক্রমে আনীত সকল মামলাই এই এলাকার অন্তর্ভুক্ত)।
- আধা-আবশ্যিক এলাকা (সন্ধি বা চুক্তিপত্রের ব্যাখ্যাদান এই এলাকাভুক্ত একটি ক্ষমতা)।
- পরামর্শদান এলাকা (কোনো ক্ষেত্রে আইনগত সমস্যা দেখা দিলে সাধারণ সভা, নিরাপত্তা পরিষদ এবং অন্যান্য সংস্থা এমনকি বিশেষজ্ঞ সংস্থাগুলিও এই এলাকায় অংশগ্রহণ করতে পারে)।
কর্মদপ্তর বা সচিবালয় (Secretariat):
সনদের ৯৭ নং ধারায় বলা হয়েছে, মহাসচিব এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কর্মীবৃন্দকে নিয়ে কর্মদপ্তর বা সচিবালয় গঠিত হবে। মহাসচিব হলেন কর্মদপ্তরের প্রধান। তাঁর অধীনে ৮ টি বিভাগ। এই বিভাগগুলি হল-
- সাধারণ সভা ও নিরাপত্তা পরিষদ বিষয়ক বিভাগ।
- অর্থনৈতিক বিভাগ।
- আইন সংক্রান্ত বিভাগ।
- সামাজিক বিভাগ।
- অছি ব্যবস্থা বিষয়ক বিভাগ।
- জনতথ্য সম্পর্কিত বিভাগ।
- সাধারণ পরিসেবা ও সম্মেলন বিষয়ক বিভাগ।
- আর্থিক ও প্রশাসনিক পরিসেবা সংক্রান্ত বিভাগ।
প্রতিটি বিভাগে ১ জন করে উপমহাসচিব থাকেন। তাঁদের সাহায্য করার জন্য কয়েকজন সহকারী মহাসচিব থাকেন। জাতিপুঞ্জের প্রথম মহাসচিব ছিলেন ট্রিগভি লি।বর্তমান মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুটারেস।মহাসচিবের প্রধান কাজ হল কর্মদপ্তরের কর্মচারীদের নিয়োগ ও অপসারণ, জাতিপুঞ্জের বিভিন্ন বিভাগের বৈঠকের ব্যবস্থা করা ও তাদের মধ্যে সমন্বয়সাধন করা, সাধারণ সভা ও নিরাপত্তা পরিষদের বিভিন্ন অধিবেশনের কর্মসূচি নির্ধারণ করা ইত্যাদি।সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠার সময় পৃথিবীর অনেক অঞ্চলের অধিবাসী স্বাধীনতা লাভের উপযুক্ত হয়ে ওঠেনি। তাদের স্বায়ত্তশাসন লাভের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাদের কয়েকটি বৃহৎ শক্তির শাসনাধীনে রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।বৃহৎ বিদেশি শক্তিরশাসনাধীনে থেকে যাতে তারা শোষণ ও অত্যাচারমুক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভের যোগ্য হয়ে উঠতে পারে, সেই ব্যবস্থা করবে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ। সানফ্রান্সিসকো সম্মেলনে ঘোষণা করা হয় যে , স্বাধীনতা লাভের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হলে তবেই ওইসব অঞ্চল স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা পাবে। এই ব্যবস্থা অছি ব্যবস্থা (Trusteeship System) নামে পরিচিত।
জাতিপুঞ্জের গুরুত্ব ও সাফল্য
জাতিপুঞ্জ বিশ্বে শান্তি, সহযোগিতা ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
বিশ্বের অধিকাংশ মানবিক সমস্যা যেমন — শরণার্থী সঙ্কট, ক্ষুধা, শিক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, ও দারিদ্র্য দূরীকরণে এটি কাজ করছে।
এছাড়া জাতিপুঞ্জের অধীনে গঠিত সংস্থাগুলি যেমন —
WHO, UNESCO, UNICEF, FAO, ILO ইত্যাদি, বিশ্বমানবতার উন্নয়নে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করছে।
উপসংহার:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানবজাতি এক নতুন আশা খুঁজে পায় জাতিপুঞ্জের মাধ্যমে।
এটি শুধুমাত্র একটি সংস্থা নয়, বরং বিশ্ব একতার প্রতীক।
যদিও সময়ের সাথে এর কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন, তবুও এর মৌলিক নীতি — শান্তি, মানবতা ও সহযোগিতা — আজও বিশ্বের স্থিতিশীলতার ভিত্তি হয়ে রয়েছে।



Post Comment