কেন্দ্র-রাজ্য প্রশাসনিক সম্পর্ক: (Center-State Administrative Relations).

কেন্দ্র-রাজ্য প্রশাসনিক সম্পর্ক: (Center-State Administrative Relations).

ভারতের সংবিধান প্রণেতাগণ ১৯৩৫ সালের ভারতশাসন আইনের অনুকরণে তিনটি তালিকার মাধ্যমে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে শাসন-সংক্রান্ত ক্ষমতা বণ্টন করেছেন।
সেগুলি হল:-

কেন্দ্রীয় তালিকা: 

প্রয়োজন অনুসারে কেন্দ্র তার শাসন-সংক্রান্ত ক্ষমতা সমগ্র ভারতে অথবা ভারতের যে-কোনো অংশে প্রয়োগ করতে পারে।

রাজ্য তালিকা:

অঙ্গরাজ্যগুলি রাজ্য সীমানার মধ্যেই তাদের শাসন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে।

যুগ্ম তালিকা: 

যুগ্ম তালিকার কোনো বিষয়ে সাধারণত রাজ্য সরকার শাসন-সংক্রান্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকে। তবে প্রয়োজন মনে করলে কেন্দ্রও যুগ্ম তালিকাভুক্ত বিষয়ে শাসন-সংক্রান্ত ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটাতে পারে।

সংবিধান অনুসারে প্রশাসনিক ক্ষমতা বণ্টন:

  • সংবিধানের বিভিন্ন ধারায় প্রশাসনিক ক্ষমতা বণ্টন সম্বন্ধীয় যাবতীয় আলোচনা বর্তমান।
  • ২৫৬-২৬৩ নং ধারায় কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রশাসনিক বা শাসন-সংক্রান্ত ক্ষমতার বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
  • সংবিধানে সাধারণভাবে বলা হয়েছে যে কেন্দ্র যে সকল বিষয় আইন প্রণয়ন করতে পারে সেই সকল বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন ক্ষমতা থাকবে।

৭৩ নং ধারা: সন্ধি বা চুক্তির ব্যাপারে কেন্দ্রের যে সমস্ত ক্ষমতা ও অধিকার আছে সে সব বিষয়েও কেন্দ্রের শাসন ক্ষমতা থাকবে।

১৬২ নং ধারা: যেসব বিষয়ে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রাজ্যগুলির হাতে আছে, সেসব বিষয় শাসন ক্ষমতাও রাজ্যগুলির হাতে থাকবে।

    ২৫৬ নং ধারা: রাজ্যের শাসন ক্ষমতা এমনভাবে পরিচালিত হবে যাতে সংসদ বিভিন্ন আইন বা প্রচলিত অন্যান্য আইনের সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্য বজায় থাকে। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় আইনগুলিকে কার্যকর করা রাজ্যগুলির প্রশাসনিক দায়িত্ব।

    ২৫৭ নং ধারা: রাজ্য সরকারগুলি তাদের শাসন ক্ষমতা এমনভাবে প্রয়োগ করবে যাতে কেন্দ্রীয় সরকারের শাসনকার্য পরিচালনায় কোনো ব্যাঘাত না ঘটে। এক্ষেত্রে কেন্দ্র প্রয়োজনবোধে রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিতে পারে।

    ২৫৮ নং ধারা: এই ধারা অনুসারে সংসদ নিজস্ব ক্ষেত্রে কোনো আইন প্রণয়ন করে অঙ্গ রাজ্যের মন্ত্রী সমেত যে-কোনো কর্মচারীকে তা বলবৎ করার জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা ও দায়িত্ব প্রদান করতে পারে এই দায়িত্ব পালন করা বাধ্যতামূলক।

    ২৬১ নং ধারা: বলে যে “পুরো বিশ্বাস এবং কৃতিত্ব ভারতের ভূখণ্ড জুড়ে ইউনিয়ন এবং প্রতিটি রাজ্যের পাবলিক অ্যাক্ট, রেকর্ড এবং বিচারিক কার্যপ্রণালীতে দেওয়া হবে।”

    ২৬২ নং ধারা: এই ধারা অনুযায়ী আন্তঃরাজ্য নদী ও নদী উপত্যকাগুলিকে নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে বিবাদ-বিসংবাদের মীমাংসার জন্য পার্লামেন্ট আইন প্রণয়ন করতে পারে। The Inter-state River Water Disputes Act, 1956 সংবিধানের ২৬২ নং ধারা অনুসারে পাশ হয়েছিল।তামিলনাড়ু ও কর্ণাটকের মধ্যে কাবেরী নদীর জলবণ্টন সংক্রান্ত বিবাদ এই আইনের দ্বারা মীমাংসা করা হয়েছিল।

    ২৬৩ নং ধারা: বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে বিরোধের কারণ অনুসন্ধান, রাজ্য সমূহের ও কেন্দ্র-রাজ্যের সাধারণ স্বার্থ বিশ্লেষণ এবং তাদের মধ্যে সংহতি সাধনের উপায় নির্দেশের জন্য রাষ্ট্রপতি ‘আন্তঃরাজ্য পরিষদ‘ (Inter State Council) গঠন করতে পারেন।

    ২৬৫ নং ধারা: আইনের কর্তব্য ব্যতীত কোনো শুল্ক আরোপ বা আদায় করা হবে না তার বিধান রয়েছে।

    ৩১২ নং ধারা: কেন্দ্রীয় রাষ্ট্র কৃত্যক কমিশনের দ্বারা দেশের জন্য প্রশাসন বিভাগীয় ও পুলিশ বিভাগীয় কর্মচারী (I.A.S.  I.P.S.) মনোনয়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

    ৩৫২ নং ধারা: বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে এবং আভ্যন্তরীণ গোলযোগ থেকে রাজ্যগুলোকে রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রপতি সমগ্র দেশে বা কোনো অংশে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন। জরুরী অবস্থায় সকল রাজ্যের শাসন বিভাগ শাসন কার্য পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে কেন্দ্রের নির্দেশ অনুসারে চলতে বাধ্য।

    ১৩১ নং ধারা: সুপ্রিম কোর্টের মূল এখতিয়ার একটি ফেডারেল আদালত হিসাবে, সুপ্রিম কোর্টের ভারতীয় ফেডারেশনের বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করার অধিকার রয়েছে। যেমন: কেন্দ্র এবং এক বা একাধিক রাজ্যের মধ্যে এবং রাজ্যগুলির মধ্যে।

    close