গঙ্গা নদীর অববাহিকা; গঙ্গা নদীর শাখা নদী ও উপনদী:


গঙ্গা নদীর উৎপত্তি:

উত্তরাঞ্চলের কাশী জেলার গঙ্গোত্রী হিমাবাহের গোমুখ গুহা (৭০১০ মিটার উচ্চতায়) থেকে গঙ্গা নদীর উৎপত্তি হয়েছে (২৫২৫ কিমি)। এটি উৎপত্তি স্থলে ভাগীরথী নামে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে দেবপ্রয়াগে অলকানন্দার সাথে মিলিত হয় এবং গঙ্গা নামে প্রবাহিত হয়।

  • বিষ্ণু প্রয়াগ:— অলকানন্দা উৎপত্তি স্থল থেকে প্রবাহিত হয়ে বিষ্ণু প্রয়াগে ধৌলিগঙ্গার সাথে মিলিত হয়ে অলকানন্দা নামে প্রবাহিত হয়।
  • কর্ণপ্রয়াগ:— পরবর্তীক্ষেত্রে পিণ্ডার হিমবাহ থেকে পিণ্ডার নদী উৎপন্ন হয়ে কর্ণপ্রয়াগে অলকানন্দার সঙ্গে মিলিত হয় এবং আবার সেই মিলিত প্রবাহ অলকানন্দা নামে প্রবাহিত হয়।
  • রুদ্র প্রয়াগ:— এরপর অলকানন্দা মন্দাকিনী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। এই মন্দাকিনী নদী কেদারনাথ থেকে উৎপন্ন হয়। রুদ্রপ্রয়াগে অলকানন্দা ও মন্দাকিনীর মিলিত প্রবাহ অলকানন্দা নামেই প্রবাহিত হয়।
  • দেবপ্রয়াগ:— অবশেষে অলকানন্দা ও ভাগীরথী দেবপ্রয়াগে মিলিত হয়ে গঙ্গা নামে প্রবাহিত হয়।

গঙ্গা নদীর উচ্চগতি:— দেবপ্রয়াগের পর গঙ্গা আরও দক্ষিণে হরিদ্বারে পড়েছে। (উচ্চগতিপথ - ২৮০ কিমি)

গঙ্গা নদী মধ্যগতিপথ:— হরিদ্বার থেকে বিহারের রাজমহল পর্যন্ত।

গঙ্গা নদী নিম্নগতিপথ:— রাজমহল থেকে মোহনা পর্যন্ত।

গঙ্গা এলাহবাদের নিকট যমুনার সাথে মিলিত হয়েছে এবং রাজমহলের কাছে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে। এরপর মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের নিকট দু'ভাগে ভাগ হয়ে পদ্মা নামে বাংলাদেশে এবং একটি শাখা ভাগীরথী নবদ্বীপের কাছে হুগলী নামে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।

রুদ্রপ্রয়াগে মন্দাকিনির সঙ্গে অলকানন্দা মিলিত হয়েছে।

অলকানন্দার উৎপত্তি:— বদ্রীনাথের নিকট অলকানন্দা হিমবাহ (সতোপন্থ হিমবাহ) বদ্রীনাথের নিকট পিণ্ডার হিমবাহ।

মন্দাকিনীর উৎপত্তি:— মন্দাকিনী কেদারনাথের নিকট ঘোড়াবাড়ি হিমবাহ থেকে উৎপন্ন।

গঙ্গা ভারতের দীর্ঘতম নদী এবং ২০৭১ কিমি  ভারতের মধ্যে প্রবাহিত। পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গার দৈর্ঘ্য ৫২০কিমি।

গঙ্গার বামতীরের উপনদী:
  • রামগঙ্গা:— উৎপত্তি উত্তরাখণ্ডের গাড়োয়াল অঞ্চল থেকে। ফারুকাবাদে গঙ্গার সাথে মিলিত হয়।
  • গোমতী:— উত্তর প্রদেশের হিমালয় অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়েছে, লক্ষ্ণৌ শহর এই নদীর তীরে অবস্থিত।
  • ঘর্ঘরা:— তিব্বতের Ghurla Manthata পর্বতশৃঙ্গ থেকে কর্ণালি নদীর উৎপত্তি হয়েছে। অন্যদিকে উত্তরাখণ্ড নেপাল সংযোগস্থল থেকে কালি নদী উৎপত্তি হয়েছে। এই দুই নদীর মিলিত প্রবাহের নাম ঘর্ঘরা। এটি চাপড়াতে গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়। অযোধ্যা ও ফাজিয়াবাদ এই নদীর তীরে অবস্থিত।
  • গণ্ডক:— নেপাল-তিব্বত সীমানা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে, এটি পাটনার শোনপুরের কাছে গঙ্গাতে মিলিত হয়েছে।
  • কোশি (Sorrow of Bihar):— তিব্বত থেকে সপ্তকোশী নাম নিয়ে নিয়ে উৎপত্তি হয়েছে। তিব্বতে সাতটি শাখা নেপালে তিনটি শাখায় পরিণত হয় যাকে ত্রিবেণী বলে, পরে এই ত্রিবেণী মিলিত হয়ে ভারতে কোশি নামে প্রবেশ করে।

গঙ্গার ডান তীরের উপনদী:
  • যমুনা:— যমুনেত্রী হিমবাহ (৬৩৩০ মিটার উচ্চতায়) থেকে উৎপন্ন হয়েছে (১৩৭৬ কিমি)। যমুনা গঙ্গার প্রধান ও সবচেয়ে বড় উপনদী। যমুনা গঙ্গার ডানতীরের উপনদী।
যমুনার উপনদী:
বামতীরের উপনদী:— হিন্দন, সারদা, গিরি।
ডানতীরের উপনদী:— চম্বল, বেতওয়া, কেন, টোনস। 
এলাহাবাদের কাছে গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

  • শোন:— অমরকন্টক শৃঙ্গ থেকে উৎপত্তি লাভ করে পাটনার সামনে গঙ্গার সাথে মিলিত হয়েছে। রিহান্দ ও সরযূ শোনের উপনদী। শোন মধ্য ভারতের উচ্চভূমি অমরকন্টক থেকে উৎপন্ন হয়েছে।
পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ:— গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ।

গঙ্গার প্রধান শাখা নদী:
ভাগীরথী ও হুগলী। এই নদী থেকে অসংখ্য শাখানদী ব-দ্বীপ অঞ্চলে প্রবাহিত হয়েছে।
গঙ্গার শাখানদী:— ভৈরবী, জলঙ্গী, মাথাভাঙ্গা, চূর্ণি, পিয়ালী, রায়মঙ্গল, জামিয়া, সপ্তমুখী, মাতলা, গড়াই, বড়তলা।

গঙ্গার ডানতীরের উপনদী:— বাঁশলই, ব্রাহ্মণী, দ্বারকা, ময়ূরাক্ষী, অজয়, দামোদর, রূপনারায়ণ (শিলাই ও দ্বারকেশ্বর) হলদি (কাঁসাই ও কেলেঘাই)।

গঙ্গার তীরে প্রধান শহর:— হরিদ্বার, এলাহাবাদ, কানপুর, বারানসী, পাটনা, মুঙ্গের, ভাগলপুর, নবদ্বীপ, কলকাতা।

যমুনার তীরে শহর:— দিল্লী, মথুরা, আগ্রা।

0 মন্তব্যসমূহ