রাওলাট আইন কি? গান্ধিজি কেন রাওলাট আইনের বিরোধিতা করে ছিল?


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের ওপর বিভিন্ন দমনমূলক নীতি চাপিয়ে দেয়। ভারতীয়দের মতামত প্রকাশের অধিকার কেড়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ব্রিটিশ সরকারের দমনপীড়নের অন্যতম নিকৃষ্ট দিক হল রাওলাট আইন প্রবর্তন (১৯১৯ খ্রিঃ)। বিচারপতি স্যার সিডনি রাওলাটের সভাপতিত্বে পাঁচজন সদস্য নিয়ে রাওলাট কমিশন বা সিডিশন কমিশন গঠিত হয়। এই কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯১৯ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় আইন সভা যে দমনমূলক আইন পাশ করে তা ‘রাওলাট আইন’ নামে পরিচিত।

ভারতীয়দের প্রতিক্রিয়া:
এই আইনের বিরুদ্ধে ভারতের সর্বত্র তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ঐতিহাসিক ডডওয়েল বলেছেন, ‘এক সঙ্কটজনক মুহূর্তে রাওলাট আইন ভারতে সর্বজনীন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল।’ এর বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া গুলি হল –
অত্যাচারী রাওলাট আইনকে কেন্দ্র করে দেশের সর্বত্র প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়। রাওলাট আইনের প্রতিবাদে মহম্মদ আলী জিন্না, মদনমোহন মালব্য এবং মাজহার-উল-হক আইন পরিষদের সদস্যপদ ত্যাগ করেন। অমৃতবাজার পত্রিকা, হিন্দু, দ্য নিউ ইন্ডিয়া, বোম্বাই ক্রনিক্যাল, কেশরী প্রভৃতি পত্রিকা এই আইনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। অত্যাচারী রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে গান্ধিজি এক দীর্ঘস্থায়ী সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলন রাওলাট সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত। এই আইনের প্রতিবাদে পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে মানুষ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সভায় যোগ দেয়। পুলিশ বিনাপ্ররোচনায় জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এই ঘটনা 'জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড’ নামে খ্যাত।

রাওলাট আইনের বিরোধিতায় গান্ধিজি:
বিভিন্ন কারণে গান্ধিজি রাওলাট আইনের বিরোধিতা করেছিলেন। যেমন –

আইনের আপত্তিকর দিক: রাওলাট আইনের মূল উদ্দেশ্যে হিসাবে বিপ্লবী ও সন্ত্রাসবাদের দমনকে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু বিনা বিচারে যে কোনো ব্যাক্তিকে আটক করা, ঘর তল্লাসি করা প্রভৃতি দমন মূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। তাই ভারতীয়দের স্বার্থে গান্ধিজি এই আইনের বিরোধিতা করেন।

জাতীয় আন্দোলনের রূপ বদল: জাতীয় কংগ্রেস প্রথম দিকে আবেদন নিবেদনের রাজনীতি করে ভারতবাসির স্বার্থরক্ষা করতে পারেনি। তাই সরাসরি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতি রেখে গান্ধিজি ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন।

সত্যাগ্রহ আদর্শের প্রয়োগ: গান্ধিজির রাজনৈতিক আদর্শ ছিল সত্যাগ্রহ। সত্যাগ্রহের মূল কথাই হল অন্যায়ের সাথে আপোষ না করা। গান্ধিজি মনে করেন রাওলাট আাইন জারি করে ব্রিটিশরা অন্যায় করেছে। তাই এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে সত্যাগ্রহ আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। 

0 মন্তব্যসমূহ