মহম্মদ-বিন-তুঘলক(Muhammad-bin-Tughlaq)১৩২৫-১৩৫১ খ্রীঃ:



দিল্লির সুলতানি সাম্রাজ্যের একজন শিক্ষিত ও বুদ্ধিমান সুলতান ছিলেন মহম্মদ-বিন-তুঘলক। সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক-এর মৃত্যুর পর তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র জুনা খাঁ, মোহাম্মদ বিন-তুঘলক নাম নিয়ে দিল্লির সিংহাসনে বসেন ১৩২৫ খ্রিষ্টাব্দে। মহম্মদ বিন-তুঘলককে বলা হয় পাগলা রাজা। কারণ সিংহাসনে বসেই তিনি যেসব রুত্বপূর্ণ শাসনতান্ত্রিক কাজকর্ম শুরু করেছিলেন, দুর্ভাগ্যবসত প্রায় সব কাজেই তিনি বার্থ হন। তাই কিছু ঐতিহাসিক তাঁকে ‘ভাগ্যহীন আদর্শবাদী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।


  মহম্মদ-বিন-তুঘলকের উল্লেখযোগ্য শাসনতান্ত্রিক পরীক্ষা-নিরিক্ষা যেগুলি তার ব্যক্তিগত চরিত্র ও প্রশাসনিক যোগ্যতার উপর বিতর্কের আলোকপাত করেছে, সেগুলি হলো---

●দোয়াব অঞ্চলের রাজস্ব বৃদ্ধি (১৩২৫-১৩২৭ খ্রীঃ):-
ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পর মহম্মদ বিন-তুঘলকের সর্বপ্রথম যে কাজটি করেছিল, সেটি হলো দোয়াব অঞ্চলের রাজস্ব বৃদ্ধি। গাঙ্গেয় দোয়াব অঞ্চলে তুলনামূলকভাবে বেশি ফসল উৎপন্ন হওয়ার কারণে তিনি এখানকার কর বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেন। এরজন্য তিনি দেওয়ান-ই-কোহ(Dewan-I-Kohi) নামে এক  কৃষিসংস্থা গঠন করেন। কিন্তু ঠিক সেই সময় সেখানে খরা দেখা দেওয়ার ফলে কৃষকরা বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তারা সুলতানকে রাজস্ব দিতে অস্বীকার করে। কৃষকদের ঋণ প্রদানের পরও সমস্যা সমাধান সম্ভব হয়নি। ঋণের অর্থ সমেত সুলতানের সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

● রাজধানী স্থানান্তর(১৩২৬-১৩২৭ খ্রীঃ):-
মহম্মদ বিন-তুঘলকের সবথেকে বিতর্কিত সিন্ধান্তটি হলো দিল্লি থেকে দৌলতাবাদে রাজধানী স্থানান্তর। তিনি তার রাজধানীকে সমস্ত স্থানীয় নাগরিক সমেত দিল্লি থেকে দেবগিরিতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি মনে করেন মধ্য ভারতে অবস্থিত দেবগিরি থেকে গোটা ভারতকে শাসন করতে সুবিধা হবে, অতপর উত্তর-পশ্চিম পথে মঙ্গল আক্রমণ-এরও কোনো ভয় থাকবেন না। কিন্তু এটি পরিকল্পনামাফিক না হওয়ায় বহু ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। শেষ পর্যন্ত তিনি আবার দিল্লি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর ফলে পুনরায় আবার ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।

● খোরাসান ও কারাজল অভিযান:-
সুলতান মহম্মদ বিন-তুঘলকের এক বিশাল সেনাদল গঠন করেন খোরাসান ও কারাজল রাজ্য অভিযানের উদ্দেশে। তিনি ভেবেছিলেন এই রাজ্যগুলিকে পরাজিত করে এখান থেকে প্রচুর পরিমানে ধনসম্পদ লুন্ঠন করবেন। কিন্তু এখানকার শাসক আগে থেকেই আত্মসমর্পণ করে কিছু বার্ষিক অর্থ দানের পতিশূরুতি দেন। এই অর্থে সেনার খরচও মেটে না। ফলে সুলতানের এই পরিকল্পনাও বার্থ হয়।

●প্রতীকী তামার মুদ্রা প্রচলন(১৩২৯-১৩৩০ খ্রীঃ):-
মহম্মদ বিন-তুঘলকের  সবথেকে বড় বিফল সংস্কার হলো প্রতীকী তামার মুদ্রা প্রচলন (switched currency from silver to brass and copper tokens)। সুলতান তার বিফল কর্মগুলির জন্য অর্থের ঘারতি পূরণের জন্য সোনার মুদ্রার সমান মূল্যের তামার মুদ্রা চালুকরেন। কিন্তু এই মুদ্রা বিপুর পরিমানে নকল হতে থাকে। ফলে শেষপর্যন্ত সুলতান এই প্রতীকী মুদ্রাও তুলে নিতে বাধ্য হয়। তিনি আরেকটি জঘন্যতম কাজ করেছিলেন। পিতা গিয়াসউদ্দিন তুঘলক বাংলা জয় করে ফেরার পথে পুত্র জুনা খাঁ(মহম্মদ বিন-তুঘলকের) পিতার বিশ্রামের জন্য কাঠের মন্দির(ম্যাহেল) তৈরি করান আফগানপুরী গ্রামে। এই কঠম্যাহেলের নিচে চাপা পড়ে গিয়াসউদ্দিন তুগলাক-এর মৃত্যু হয়।

এইসব ব্যর্থতা স্বত্বেও সুলতান মহম্মদ বিন-তুঘলককে একজন অসফল শাসক বলা চলেনা। এইসমস্ত পরিকল্পনাগুলো তার একার ছিলনা, সমস্ত মন্ত্রিপরিষদও এর সাথে যুক্ত ছিল। সর্বোপরি তিনি দিল্লির সিংহাসনে বহুকাল (প্রায় ২৬ বছর, ১৩২৫-১৩৫১) রাজত্ব করেছিলেন।

⭐আজও কেও কোনো ভুল কাজ করলে তাকে তুঘলকি কর্মকান্ড বলা হয়।

1 মন্তব্যসমূহ